পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ রামমণি জাতিতে নাপিতের কন্যা ; তবে অবস্থা ভাল, দেখিতেও মন নহে, এই নাকটি সামান্ত চাপা মাত্র। কোন কোন পরশ্ৰীকাতর লোক তাহার চোখের দোষ দিত, বলিত, হাতীর চোখের চেয়েও ছোট । যাক, এ নিন্দাবাদে আমাদের প্রয়োজন নাই। রামমণি একটু হাসিয়া বলিল, তোমাদের ঘটে যদি বুদ্ধি থাকত তা হলে কি আর ও-কথা বল ? ছুড়ি সদাসৰ্ব্বদা যে ফিক্ ফিক্‌ করে হেসে কথা বলত, তাতেই আমার সন্দেহ হয়েছিল, স্বভাব-চরিত্র মন্দ লো, স্বভাব-চরিত্র মন্দ । না হলে চাকরী-স্থান থেকে তাড়িয়ে দেয় ? আবার বে করে ? মুখে কিছু না বলিলেও কথাটা অনেকের মতের সহিত মিলিল । ইহার দুই-একদিন পরে, গ্রামের প্রায় সকলেই জানিল যে, রামমণি জমিদারের বাটীর গৃঢ় রহস্য ভেদ করিয়াচে। নাপিতের মেয়ে না হইলে এত বুদ্ধি কি বামনকায়েতের মেয়ের হয় ? কথাটা অনেকেই স্বীকার করিল। এবার গৃহিণীর পালা । এ-কথা যখন র্তাহার কানে গেল, তিনি ঘরের কপাট বন্ধ করিয়া একেবারে ভূমে লুটাইয়া পড়িলেন । আমার নলিনী কুলট ! কি জানি কেন গৃহিণী সরলা অপেক্ষা নলিনীকে ভালবাসিয়াছিলেন। জন্মের মত সেই নলিনীর কপাল ভাঙ্গিয়া গিয়াছে । গৃহিণী মনে মনে ভাবিলেন, সত্য হয় ভালই— না হয় আমি নলিনীকে লইয়া কাশীবাসী হইব । পোড়াকপালির এ-জন্মের মত সব সাধই ত মিটিয়াছে। তখন তিনি দ্বার খুলিয়া মাতুকে ডাকিয়া আনিয়া আবার দ্বার বন্ধ করিলেন। মাতুই তত্ত্ব লইয়া আসিয়াছিল। দুইজনের চক্ষুজলের বহু বিনিময় হইল। কেমন করিয়া নলিনীর সোনার বর্ণ কালি হইয়াছে, কি অপরাধে সত্যেন্দ্র তাহাকে পায়ে ঠেলিয়াছে, কত কাতর বচনে সে ঠাকুরাণীকে প্রণাম জানাইয়াছে, ইত্যাদি বিবরণ মাতঙ্গিনী বেশ করিয়া বিনাইয়া বিনাইয়া চক্ষু মুছিতে মুছিতে গৃহিণীকে শুনাইল। শুনিতে শুনিতে গৃহিণীর পূৰ্ব্বস্নেহ শতগুণ বৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিল, পুত্রের উপর দারুণ অভিমান জন্মিল। মনে মনে তিনি ভাবিলেন, আমি কি সত্যর কেউ নহি ? সকল কথাই কি আমার উপেক্ষার যোগ্য ? আমার কি একটা কথাও থাকিবে না ? আমি আবার নলিনীকে গৃহে আনিব । অমন লক্ষ্মীর কি এ দশা করিতে আছে ? সেইদিন সন্ধ্যার সময় জননী পুত্রকে ডাকিরা বলিলেন, নলিনীকে নিয়ে এসো। পুত্র ঘাড় মাড়িয়া বলিল, না । জননী কাদিয়া ফেলিলেন, বলিলেন, ওরে আমার নলিনীর নামে গ্ৰামময় কলঙ্ক বুটচে যে, তুই তার স্বামী—তার মান রাখবিনি? Qo Q