ঠাকুর নেই।
কোথায় গেছে?
বাবু তাকে তাড়িয়ে দিয়েচেন।
তাড়িয়ে দিয়েচেন! কেন?
চুরি করেছিল বলে।
প্রথমে আমি কথাটা ভাল বুঝিতে পারি নাই, তাই কিছুক্ষণ রামার মুখপানে চাহিয়া রহিলাম। রামা আমার মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া একটু মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল, ছোটবাবু, আশ্চর্য্য হচ্ছেন, কিন্তু তাকে ত আপনারা চিনতেন না। তাই অত ভালবাসতেন। সে মিট-মিটে ডান ছিল; ভিজে বেড়ালকে আমি চিনতাম।
কিসে সে মিট-মিটে ডাইন ছিল, কিংবা কেন যে সেই সিক্ত মার্জ্জারকে চিনিতে পারি নাই, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। জিজ্ঞাসা করিলাম, কার টাকা চুরি করেচে?
সেজবাবুর।
কোথায় ছিল?
জামার পকেটে।
কত টাকা?
চার টাকা।
কে-দেখেচে?
চোখ দিয়ে কেউ দেখেনি বটে, কিন্তু সে একরকম দেখাই।
কেন?
সে-কথা কি আর জিজ্ঞাসা করতে হয়? আপনি বাসায় ছিলেন না; রামবাবু নিলেন না, জগন্নাথবাবু নিলেন না; আমি নিলাম না। তবে নিলে কে? কোথায় গেল?
তুই তবে তাকে ধরেচিস্?
রামা হাসিয়া বলিল, না হলে আর কে?
ঠনঠনের চটি-জুতা আপনার স্বচ্ছন্দে কিনতে পারেন। তেমন মজবুত চটি বোধ হয় আর কোথাও প্রস্তুত হয় না।
আমি রন্ধনশালায় গিয়া কাঁদিয়া ফেলিলাম। সেই ছোট হুঁকোটিতে ধূলা পড়িয়া রহিয়াছে। আজ চার-পাঁচদিন তাহা কেহ স্পর্শ করে নাই; কেহ জল বদলায় নাই। দেওয়ালে একস্থানে কয়লায় লেখা রহিয়াছে, সুকুমারবাবু, আমি চুরি করিয়াছি। এ-স্থান হইতে চলিলাম। বাঁচিয়া থাকি আবার আসিব।