পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দুর্গাদাসবাবুর যখন কুড়ি বৎসর বয়স, তখনকার কথাই বলিতেছি। দুর্গাদাস এতদিন কলিকাতাতেই পড়িত। বাড়ি আদিতে হইলে মারে দক্ষিণ দিকে যাইতে হইত, তাহার পরেও প্রায় হাট-পথে দশ-বারো ক্রোশ আসিতে হইত ; স্বতরাং পথটা বড় সহজগম্য ছিল না। এইজন্যই দুর্গাদাসবাৰু বড় একটা বাড়ি যাইতেন না । ছেলে বি. এ. পাশ হইয়া বাড়ি আসিয়াছে। মাতাঠাকুরাণী অতিশয় ব্যস্ত। ছেলেকে ভাল করিয়া খাওয়াইতে, দাওয়াইতে, যত্ন-আত্মীয়তা করিতে, যেন বাটীস্থদ্ধ সকলেই একসঙ্গে উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়িয়াছে। দুর্গাদাস জিজ্ঞাসা করিল মা, এ ছেলেটি কে গা ? মা বলিলেন, এটি একজন কারেতের ছেলে ; বাপ-মা নেই, তাই কৰ্ত্তা ওকে নিজে রেখেচেন । চাকরের কাজকৰ্ম্ম সমস্তই করে, আর বড় শাস্ত ; কোন কথাতেই রাগ করে না । আহা ! বাপমা নেই—তাতে ছেলেমাকুষ—আমি বড় ভালবাসি । বাড়ি আসিয়া দুর্গাদাসবাবু হরিচরণের এই পরিচয় পাইলেন। যাহা হোক, আজকাল হরিচরণের অনেক কাজ ধাড়িয়া গিয়াছে। সে তাহাতে সন্তুষ্ট ভিন্ন অসন্তুষ্ট নহে। ছোটবাবুকে (দুর্গাদাসকে ) স্নান করানো, দরকার-মত জলের গাডু, ঠিক সময়ে পানের ডিবে, উপযুক্ত অবসরে হকা ইত্যাদি যোগাড় করিয়া রাখিতে হরিচরণ বেশ পটু। দুর্গাদাসবাবুও প্রায় ভাবেন, ছেলেটি বেশ intelligent স্থতরাং কাপড় কোচান তামাক সাজা প্রভৃতি কৰ্ম্ম হরিচরণ না করিলে দুর্গাদাসবাবুর পছন্দ হয় না। কিছু বুঝি না, কোথাকার জল কোথায় দাড়ায় । মনে আছে কি ? একবার দুজনে কাদিতে কঁাদিতে পড়ি বড়ই দুরূহ তত্ত্ব । আমার বোধ হয় সব কথাতেই এটা খাটে। দেখেছি কি—ভাল থেকে কেবল ভালই দাড়ায়, মন্দ কি কখনও আসিয়া দাড়ায় না ? যদি না দেখিয়া থাকে। তবে এসো আজ তোমাকে দেখাই বড়ই হ্ৰহ্মহ তত্ত্ব। উপরি-উক্ত কথা কয়টি সকলের বুঝিতে পারা সম্ভবও নয়, প্রয়োজনও নাই, আর আমারও Philosophy নিয়ে deal করা উদ্বেগু নহে ; তবুও আপোষে দুটো কথা বলিয়া রাখায় ক্ষতি কি ? আজ দুর্গাদাসবাবুর একটা জ'কাল ভোজের নিমন্ত্রণ আছে। বাড়িতে খাইবেন না, সম্ভবতঃ অনেক রাত্রে ফিরিবেন। এইসব কারণে হরিচরণকে প্রাত্যহিক কৰ্ম্ম সারিয়া রাখিয়া শয়ন করিতে বলিয়া গেছেন। w';