পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হরি রাত্রে যখন পদসেবা করিতেছিল, তখন এক ফোট গরম জল বোধ হয় দুর্গাদাসবাবুর পায়ের উপর পড়িয়াছিল। সমস্ত রাত্রি দুর্গাদাসবাবুর নিদ্রা হয় নাই। এক ফোটা জল বড়ই গরম বোধ হইয়াছিল। দুর্গাদাসবাৰু হরিচরণকে বড়ই ভালবাসিতেন। তাহার নম্রতার জন্ত সে দুর্গাদাসবাবুর কেন, সকলেরই প্রিয়পাত্র ছিল । বিশেষ এই মাস-খানেকের ঘনিষ্ঠতায় সে আরও প্রিয় হইয়া দাড়াইয়াছিল। রাত্রে কতবার দুর্গাদাসবাবুর মনে হইল যে, একবার দেখিয়া আসেন, কত লাগিয়াছে, কত ফুলিয়াছে। কিন্তু সে যে চাকর, তা ত ভাল দেখায় না ! কতবার . মনে হইল, একবার জিজ্ঞাসা করিয়া আসেন, জরটা কমিয়াছে কি না । কিন্তুষ্ট্র তাহাতে লজ্জা বোধ হয়! সকালবেলায় হরিচরণ মুখ ধুইবার জল আনিয়া দিল, তামাক সাজিয়া দিল। দুর্গাদাসবাবু তখনও যদি বলিতেন, আহা ! সে ত বালক : মাত্র, তখনও ত তাহার ত্রয়োদশ বর্ষ উত্তীর্ণ হয় নাই। বালক বলিয়াও যদি একবার কাছে টানিয়া লইয়া দেখিতেন, তোমার বেতের আঘাতে কিরূপ রক্ত জমিয়া আছে, তোমার জুতার কাঠিতে কিরূপ ফুলিয়া উঠিয়াছে। বালককে আর লজ্জা কি ? বেলা নয়টার সময় কোথা হইতে একখানা টেলিগ্রাম আসিল। তারের সংবাদে দুর্গাদাসবাবুর মনটা কেমন বিচলিত হইয়া উঠিল। খুলিয়া দেখিলেন, স্ত্রীর বড় পীড়া। ধড়াস করিয়া বুকখানা একহাত বসিয়া গেল। সেইদিনই তাহাকে কলিকাতায় চলিয়া আসিতে হইল। গাড়িতে উঠিয়া ভাবিলেন, ভগবান! বুঝি-বাপ্রায়শ্চিত্ত হয়। প্রায় মাস-খানেক হইয়া গিয়াছে। দুর্গাদাসবাবুর মুখখানি আজ বড় প্রফুল্প, র্তাহার স্ত্রী এ-যাত্রা বাচিয়া গিয়াছেন। অদ্য পথ্য পাইয়াছেন। বাড়ি হইতে আজ একখানা পত্র আসিয়াছে। পত্ৰখানি দুর্গাদাসবাবুর কনিষ্ঠ ভ্রাতার লিখিত। তলায় একস্থানে পুনশ্চ’ বলিয়া লিখিত রহিয়াছে—বড় দুঃখের কথা, কাল সকালবেলা দশ দিনের জর-বিকারে আমাদের হরিচরণ মরিয়া গিয়াছে। মরিবার আগে সে অনেকবার আপনাকে দেখিতে চাহিয়াছিল। আহা ! মাতৃ-পিতৃহীন অনাথ ! ধীরে ধীরে দুর্গাদাসবাৰু পত্ৰখানা শতধা ছিন্ন করিয়া ফেলিয়া দিলেন। ●錦●