পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু টলিয়া সেই ধূলা-বালুর উপরেই মূচ্ছিতের মত ধপ, করিয়া বসিয়া পড়িলাম। আর আমার লেশমাত্র সংশয় রহিল না যে, কে আমাকে এক মহাশ্মশান হইতে আর এক মহাশ্মশানে পথ দেখাইয়া পৌছাইয়া দিয়া গেল। সেই যাহার পদশব্দ শুনিয়া ভাঙা ঘাটের উপর গা-ঝাড়া দিয়া উঠিয়া দাড়াইয়াছিলাম, তাহার পদশব্দ এতক্ষণ পরে ওই সম্মুখে মিলাইল । $o সমস্ত ঘটনারই হেতু দেখাইবার জিদুটা মানুষের সে বয়সে থাকে সে বয়স আমার পার হইয়া গেছে । সুতরাং কেমন করিয়াই যে এই সূচিভেদ্য অন্ধকার নিশীথে একাকী পথ চিনিয়া দীঘির ভাঙাঘাট হইতে এই শ্মশানের উপকণ্ঠে আসিয়া উপস্থিত হইলাম, এবং কাহারই বা সেই পদধ্বনি সেখানে আহবান-ইঙ্গিত করিয়া এইমাত্র স্বমুখে মিলাইয়া গেল, এ সকল প্রশ্নের মীমাংসা করিবার মত বুদ্ধি আমার নাই—পাঠকের কাছে আমার দৈন্য স্বীকার করিতে এখন আর আমি কিছুমাত্র লজ্জা বোধ করিতেছি না । এ রহস্য আজও আমার কাছে তেমনি আঁধারে আবৃত রহিয়াছে। কিন্তু তাই বলিয়া প্রেতযোনি স্বীকার করাও এ স্বীকারোক্তির প্রচ্ছন্ন তাৎপর্ঘ্য নয়। কারণ নিজের চোখেই ত দেখিয়াছি—আমাদের গ্রামেই একটা বৃদ্ধ পাগল ছিল ; সে দিনেরবেলা বাড়ি বাড়ি ভাত চাহিয়া খাইত আর রাত্ৰিতে একটা ছোট মইয়ের উপর কোচার কাপড়টা তুলিয়া দিয়া, সেটা স্বমুখে উচু করিয়া ধরিয়া পথের ধারের বাগানের মধ্যে গাছের ছায়ায় ঘুরিয়া বেড়াইত। সে চেহারা দেখিয়া অন্ধকারে কত লোকের যে দাতকপাটি লাগিয়াছে, তাহার অবধি নাই । কোন স্বার্থ নাই, অথচ এই ছিল তাহার অন্ধকার রাত্রির কাণ্ড । নিরর্থক মানুষকে ভয় দেখাইবার আরও কত প্রকারের অদ্ভূত ফন্দি যে তাহার ছিল, তাহার সীমা নাই। শুকনো কাঠের আটি গাছের ডালে বাধিয়া তাহাতে আগুন দিত ; মুখে কালিঝুলি মাখিয়া বিশালাক্ষী দেবীর মন্দিরে বহুক্লেশে খড়া বাহিয়া উঠিয়া বসিয়া থাকিত ; গভীর রাত্রিতে ঘরের কানাচে বসিয়া খোনা গলায় চাষীদের নাম ধরিয়৷ ডাকিত । অথচ কেহ কোনদিন তাহাকে ধরিতে পারে নাই ; এবং দিনের বেলায় তাহার চাল-চলন, স্বভাব-চরিত্র দেথিয়া ঘুর্ণাগ্রেও তাহাকে সংশয় করিবার কথা কাহারও মনে উদয় হয় নাই। আর এ শুধু আমাদের গ্রামেই নয়—আট-দশখান। গ্রামের মধ্যেই সে এই কৰ্ম্ম করিয়া বেড়াইত। মরিবার সময় নিজের বজ্জাতি সে নিজে স্বীকার করিয়া যায় ; এবং թ Պ १भ-१७