পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পিয়ারী কহিল, থাকৃ পড়ে। তাদের ইচ্ছা হয় তোমাকে পাঠিয়ে দেবে, না হয় থাক গে। তার দাম বেশী নয় । আমি বলিলাম, তার দাম বেশী নয় সত্য ; কিন্তু যে মিথ্যা কুৎসার রটনা হবে, তার দাম ত কম নয় ! পিয়ারী আমার পা ছাড়িয়া দিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। গাড়ি এই সময় মোড় ফিরিতেই পিছনটা আমার সম্মুখে আসিয়া পড়িল। হঠাৎ মনে হইল, সম্মুখের ওই পূৰ্ব্ব আকাশটার সঙ্গে এই পতিতার মুখের কি যেন একটা নিগৃঢ় সাদৃশ্ব রহিয়াছে। উভয়ের মধ্য দিয়াই যেন একটা বিরাট অগ্নিপিণ্ড অন্ধকার ভেদ করিয়া আসিতেছে—তাহারই আভাস দেখা দিয়াছে। কহিলাম, চুপ করে রইলে যে ? পিয়ারী একটুখানি স্নান হাসি হাসিয়া বলিল, কি জানো কাস্তদা, যে কলম দিয়ে সার-জীবন শুধু জালখত তৈরি করেচি, সেই কলমটা দিয়েই আজ আর দানপত্র লিখতে হাত সৰ্বচে না। যাবে? আচ্ছা যাও! কিন্তু কথা দাও—আজ বেলা বারোটার আগেই বেরিয়ে পড়বে ? আচ্ছা । কারো কোনো অনুরোধেই আজ রাত্রি ওখানে কাটাবে না, বল ? না । পিয়ারী হাতের আঙটি খুলিয়া আমার পায়ের উপর রাথিয়া গলবস্ত্র হইয়া প্ৰণাম করিল ; এবং পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া আঙটিটা আমার পকেটে ফেলিয়া দিল। বলিল, তবে যাও—বোধ করি ক্রোশ-দেড়েক পথ তোমাকে বেশী হাটতে হবে। গো-যান হইতে অবতরণ করিলাম। তখন প্রভাত হইয়াছিল। পিয়ারী অমুনয় করিয়া কহিল, আমার আর একটি কথা তোমাকে রাখতে হবে । বাড়ি ফিরে গিয়ে একখানি চিঠি দেবে। আমি স্বীকার করিয়া প্রস্থান করিলাম। একটিবারও পিছনে চাহিয়া দেখিলাম না, তখনও তাহারা দাড়াইয়া আছে কিম্বা অগ্রসর হইয়াছে। কিন্তু বহুদূর পর্য্যস্ত অনুভব করিতে পারিলাম, দুটি চক্ষের সজল-করুণ দৃষ্টি আমার পিঠের উপর বারংবার আছাড় খাইয়া পড়িতেছে। আড্ডায় পৌছাইতে প্রায় আটটা বাজিয়া গেল। পথের ধারে পিয়ারীর ভাঙার্তাবুর বিক্ষিপ্ত পরিত্যক্ত জিনিসগুলো চোখে পড়িবামাত্র একটি নিফল ক্ষোভ বুকের মধ্যে যেন হাহাকার করিয়া উঠিল। মুখ ফিরাইয়া দ্রুতপদে তাবুর মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলাম। পুরুষোত্তম জিজ্ঞাসা করিল, আপনি বড় ভোরেই বেড়াতে বার হয়েছিলেন ? আমি ই-না কোন কথাই না বলিয়া শয্যায় চোখ বুজিয়া গুইয়া পড়িলাম। 》