পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ ভাবে বলিয়াছিল—মরতে একদিন ত হবেই-এমন সত্য কথা বণিতে কয়টা মানুষকে দেখা যায় ? সে-ই জামাকে এই বিপদের মধ্যে টানিয়া আনিয়াছে সত্য, কিন্তু সে যাই হোক, তাহার এত বড় স্বাৰ্থত্যাগ আমি মামুষের দেহ ধরিয়া ভুলিয়া যাই কেমন করিয়া ? কেমন করিয়া ভুলি, যাহার হৃদয়ের ভিতর হইতে এত বড় অষাচিত দান এতই সহজে বাহির হইয়। আসিল সে হৃদয় কি দিয়া কে গড়িয়া দিয়াছিল! তার পরে কত কাল কত সুখ-দুঃখের ভিতর দিয়া আজ এই বাৰ্দ্ধক্যে উপনীত হইয়াছি। কত দেশ, কত প্রাস্তর, কত নদ-নদী পাহাড়-পৰ্ব্বত বন-জঙ্গল ঘাটিয়া ফিরিয়াছি, কত প্রকারের মানুষই না এই দুটো চোখে পড়িয়াছে, কিন্তু এত বড় মহাপ্রাণ ত আর কখনও দেখিতে পাই নাই! কিন্তু সে আর নাই । অকস্মাৎ একদিন যেন বুদবুদের মত শূন্তে মিলাইয়া গেল। আজ মনে পড়িয়া এই দুটো শুষ্ক চোখ জলে ভাসিয়া যাইতেছে—কেবল একটা নিষ্ফল অভিমান হৃদয়ের তলদেশ আলোড়িত করিয়া উপরের দিকে ফেনাইয়া উঠিতেছে । স্বষ্টিকৰ্ত্তা! এই অদ্ভুত অপার্থিব বস্তু কেনই বা স্বাক্ট করিয়া পাঠাইয়াছিলে, এবং কেনই বা তাহা এমন ব্যর্থ করিয়া প্রত্যাহার করিলে ! বড় ব্যথায় আমার এই অসিহষ্ণু মন আজ বারংবার এই প্রশ্নই করিতেছে-ভগবান । টাকাকড়ি, ধন-দৌলত, বিদ্যা-বৃদ্ধি ঢের ত তোমার অফুরন্ত ভাণ্ডার হইতে দিতেছ দেখিতেছি, কিন্তু এত বড় একটা মহাপ্রাণ আজ পর্য্যস্ত তুমিই বা কয়টা দিতে পারিলে ? স্বাকৃ সে কথা । ক্রমশঃ ঘোর-কলকল্লোল নিকটবৰ্ত্তী হইতেছে, তাহ উপলব্ধি করিতেছিলাম, অতএব আর প্রশ্ন না করিয়াই বুঝিলাম, এই বনাগুরালেই সেই ভীষণ প্রবাহু যাহাকে অতিক্রম করিয়া স্টীমার যাইতেপারে না --তাহাই প্রবাহিত হইতেছে । বেশ অনুভব করিতেছিলাম, জলের বেগ বৰ্দ্ধিত হইতেছে এবং ধূসর ফেনপুঞ্জ বিস্তৃত বালুকারাশির ভ্রমোৎপাদন করিতেছে। ইন্দ্ৰ আসিয়া নৌকায় উঠিল এবং বোটে হাতে করিয়া সম্মুখবর্তী উদাম স্রোতের জন্য প্রস্তুত হইয়া বসিল । কহিল, জার ভয় নেই, বড় গাঙে এসে পড়েচি। মনে মনে কছিলাম, ভয় না থাকে ভালই। কিন্তু কিলে যে তোমার ভয় আছে, তাও ত বুঝিলাম না। পরক্ষণেই সমস্ত নৌকাট। আপাদমস্তক একবার ৰেন শিহরিয়া উঠিল, এবং চক্ষের পলক না ফেলিতেই দেখিলাম, তাহা বড় গাডের স্রোতধরিয়া উদ্ধাবেগে ছুটয়া চলিয়াছে। তথন ছিন্নভিন্ন মেঘের আড়ালে বোধ করি ষেন চাদ উঠিতেছিল ! কারণ, যে অন্ধকারের মধ্যে যাত্রা করিয়াছিলাম, সে অন্ধকার আর ছিল না। এখন অনেক দূর পৰ্যন্ত অস্পষ্ট হইলেও দেখা যাইতেছিল। দেখিলাম, বন-ঝাউ, এবং ভুট্টা-জনারের চড়া ডান দিকে রাথিস্থা নৌকা আমাদের সোজা চলিতে লাগিল । יש3