আচ্ছা, বলিয়া বিজয়া হাসিমুখে একটা কোচের উপর গিয়া বসিল। খানিক পরেই প্রশ্ন করিল, খাবার বন্দোবস্ত?
বিলাস ফিরিয়া চাহিয়া বলিল, সমস্ত ঠিক হচ্চে—কোন চিন্তা নেই।
আচ্ছা, আমি কেন সেই দিকেই যাইনে?
বেশ ত। বলিয়া বিলাস পুনরায় কাজে মন দিল।
বেলা আটটার মধ্যেই সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ হইয়া গেল। ইতিমধ্যে বিজয়া অনেকবার আনাগোনা করিয়া অনেক ছোটখাট ব্যাপারে বিলাসের পরামর্শ লইয়া গেছে—কোথাও বাধে নাই। না জানিয়া কখন যে সঞ্চিত বিরোধের গ্লানি কাটিয়া উভয়ের কথাবার্তার পথ এমন সহজ ও সুগম হইয়া গিয়াছিল, দুইজনের কেহই বোধ করি খেয়াল করে নাই।
বিজয়া হাসিয়া বলিল, আমাকে একবারে অপদার্থ মনে করে বাদ দিলেন কিন্তু আমিও আপনার একটা ভুল ধরেচি তা বলচি।
বিলাস একটু আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, অপদার্থ একবারও মনে করিনি, কিন্তু ভুল কি রকম?
বিজয়া বলিল, আমরা আছি ত মোটে চার-পাঁচজন, কিন্তু খাবারের আয়োজন হয়ে পড়েচে প্রায় কুড়ি জনের, তা জানেন?
বিলাস কহিল, সে ত বটেই। বাবা তাঁর কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করেচেন। তাঁরা ক'জন, কে কে আসবেন, তা ত ঠিক জানিনে।
বিজয়া ভয়ানক বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, কৈ, সে ত আমাকে বলেন নি?
বিলাস নিজেও বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, এখান থেকে কাল আমি যাবার পরে বাবা তোমাকে চিঠি লিখে জানান নি?
না।
কিন্তু তিনি যে স্পষ্ট বললেন—বিলাস থমকিয়া গেল।
বিজয়া প্রশ্ন করিল, কি বললেন?
বিলাস ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া কহিল, হয়ত আমারই শোনবার ভুল হয়েছে। তিনি চিঠি লিখে জানাবেন বলে বোধ করি ভুলে গেছেন।
বিজয়া আর কোন প্রশ্ন করিল না; কিন্তু তাহার মনের ভিতর জ্যোৎস্নার প্রসন্নতা সহসা যেন মেঘে ঢাকিয়া গেল।
আধ-ঘণ্টা পরে রাসবিহারী স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত হইলেন, এবং বেলা নয়টার মধ্যেই তাঁহার নিমন্ত্রিত বন্ধুর দল একে একে দেখা দিতে লাগিলেন। ইঁহাদের