পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ খরচ কি সব ছোটবাবুর ? ই, তাই তো । বন্দন জিজ্ঞাসা করিল, এ কি তার পক্ষে খুব বেশী মনে হয় দত্তমশাই ? বিরাজ দত্ত বলিলেন, খুব বেশী না হলেও সম্প্রতি গেলও যে অনেক দিদি ৷ এখন সামলে চলার প্রয়োজন। এর উপর নতুন বিপদ আসতেই বা কতক্ষণ ? আবার নতুন বিপদ কিসের ? দত্ত ক্ষণকাল মৌন থাকিয়ু বলিলেন, আপনি কি শোনেননি জামাইবাবুর সঙ্গে মামলা বেঁধেচে ? এ-সব বস্তুর পরিণাম ত জানেন, ফলাফল কেহ বলতে পারে না । তবে নিষেধ করেননি কেন ? নিষেধ ? এ তো বড়বাবু নয় দিদি, যে নিষেধ মানবেন । একে নিষেধ করতে শুধু একজনই ছিলেন তিনি এখন স্বর্গে। বলিয়া বিরাজ দত্ত নিশ্বাস ফেলিলেন। বন্দন আর কোন প্রশ্ন করিল না । বাড়ির কাছে আসিয়া দেখিল স্বমুখের মাঠের একদিকে কাঠ কাটিয়া স্তপাকার করা হইয়াছে । যে-সকল চালা-ঘর দয়াময়ীর ব্ৰতোপলক্ষ্যে সেদিন তৈরি হইয়াছিল, সেগুলো মেরামত হইতেছে, বাহির প্রাঙ্গণে বিরাট মণ্ডপ নিৰ্ম্মিত হইতেছে, তথায় বহু লোক বিবিধ কাজে নিযুক্ত। বিরাজ দত্ত অত্যুক্তি করে নাই বন্দন তাহা বুঝিল । গাড়ি-হইতে নামিয়া সে সোজা উপরে গিয়া উঠিল । প্রথমেই গেল দ্বিজদাসের ঘরে । , একটা বালিশে হেলান দিয়া সে বিছানায় শুইয়াছিল, পর্দা সরানোর শব্দে চোখ মেলিয়া উঠিয়া বসিল, বলিল, বন্ধু আপনি এলে আমার ঘরের দোড়গোড়ায় । বনানা বলিল, ই এলোই ত। কিন্তু এমন সময়ে শুয়ে কেন ? দ্বিজদাস বলিল, চোখ বুজে তোমাকেই ধ্যান করিছিলুম আর মনে মনে বলছিলুম, বন্দনা, দুঃখের সীমা নেই আমার । দেহে নেই বল, মনে নেই ভরসা, বোধ করি আর ঠেলতে পারব না, নৌকা মাঝখানেই ডুববে। ও-পারে পৌছনো আর ঘটবে না। ধমান বলিল, ঘটতেই হবে। তোমাকে ছুটি দিয়ে এইবার নৌকা বাইবার ভার নেবো অামি । তাই নাও। রাগ করে চলে যেও না । বদনা কাছে আসিয়া গড় হইয়া প্রণাম করিল, তাহার পায়ের ধূলা মাথায় লই৷ উঠিয়া দাড়াইতেই দুজনের চোখ দিয়াই জল পড়িতে লাগিল। এমনভাবে প্রণাম করা তাহার এই প্রথম। বলিল, তোমার চোখেও জল আসে এ আমি জানতুম না। দ্বিজদাস বলিল, আমিও না। বোধ করি তার আসার পথটা এতকাল বন্ধ ছিল ।

  • १४