পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ গোছা দেখাইয়া কহিল, এই দেখুন এ-বাড়ির সর্ব জালমারী-সিন্দুকের চাবি। আপনি তুলে নিয়ে আঁচলে বেঁধেচি। আনন্দ ও বিস্ময়ে বিপ্রদাস নিঃশব্দে চাহিয়া রহিলেন । বন্দন বলিতে লাগিল, আপনাকে আমার লজ্জা করে বলবার, গোপন করে বলবার কিছু নেই। ভগবানের কাছে যেমন মানুষের নেই লুকোবার কিছু ঠিক তেমনি। মনে পড়ে কি আপনার আশীৰ্ব্বাদ ? যাবার দিনে আমাকে বলেছিলেন, যে তোমার যথার্থ আপন তাকেই তুমি পাবে একদিন । সেদিন থেকে গেছে আমার চঞ্চলত, শান্তমনে কেবল এই কথাই ভেবেচি, যিনি জিতেন্দ্র, যিনি আজন্ম-শুদ্ধ সত্যবাদী সাধু, তার আশীৰ্ব্বাদে আর আমার ভয় নেই। যিনি আমার স্বামী তাকে আমি পাবোই। দুই চক্ষু তাহার অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল । বিপ্রদাস কাছে আসিয়া তাহার মাথায় হাত রাখিয়া নীরবে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন, এবং আজ এই প্রথম দিন বন্দন তাহার পায়ের উপর বহুক্ষণ মাথা পাতিয়া নমস্কার করিল। উঠিয়া দাড়াইলে বিপ্রদাস কহিলেন, আজ যাকে তুমি পেলে বন্দন, তার চেয়ে দুর্লভ ধন আর নেই। এ কথাটা আমার চিরদিন মনে রেখো । বন্দনা কহিল, রাখবো বড়দা। একদিনও ভুলবো না। একটু থামিয়া কহিল, একদিন অস্বথে আপনার সেবা করেছিলুম পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু সেদিন নিইনি,—মনে পড়ে সে কথা ? পড়ে । আজ সেই পুরস্কার চাই। বাস্থকে আমি নিলুম। বিপ্রদাস হাসিমুখে বলিলেন, নাও। তাকে শেখাবো আমাকে মা বলে ডাকতে । তাই করে । ওর মা এবং বাপ দু’জনকেই আজ রেখে গেলাম তোমার মধ্যে। আর রেখে গেলাম এই মুখুয্যে-বাড়ির বৃহৎ মৰ্য্যাদাকে তোমার হাতে । বন্দনা ক্ষণকাল মাথা হেঁট করিয়া এই ভার যেন নীরবে গ্রহণ করিল, তার পরে কহিল, আর একটি প্রার্থনা । নিজেকে চিনতে না পেরে একদিন আপনার কাছে অপরাধ করেছিলুম। ভুল ভেঙেচে, আজ তার মার্জন চাই। মাঙ্গ না অনেকদিন করেচি বন্দনা। আমি জানতাম তোমার অন্তর যাকে একান্তমনে চেয়েচে একদিন তাকে তুমি চিনবেই । তাই আমার কাছে তোমার কোন লজা নেই । বন্দনার চোখে আবার জল আসিতেছিল, জোর করিয়া নিবারণ করিয়া বলিল, আরও একটি ভিক্ষে । আমাদের সংসারে কি একদিনও থাকবেন না আর ? অভিমানে সঙ্কোচে কোনদিন মন পূর্ণ করে আপনাকে যত্ন করতে পাইনি, কিন্তু সে ծԵրe