পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ধরে চুকিয়া সতী গড় হইয়া প্ৰণাম করিল, বলিল, সেজকাক, মেয়ের বাড়িতে এতকাল পরে পায়ের ধূলো পড়ল। ভদ্রলোক উঠিয়া দাড়াইয়া সতীর মাথায় হাত দিলেন, সহস্তে কহিলেন, হ্যা রে বুড়ী, পড়ল! কবে, কোন কালে কাকাকে নেমন্তশ্ন করে খবর পাঠিয়েছিলি যে অস্বীকার করেছিলাম ? কখনো বলেচিস্ আসতে ? নিজে যখন যেচে এলাম তখন মস্ত ভণিত করে বলা হচ্ছে, পায়ের ধূলো পড়ল? দ্বিজদাসের প্রতি চোখ পড়িতে জিজ্ঞাসা করিলেন, এটি কে ? সতী পিছনে চাহিয়া দেখিয়া কহিল, ওটি আমার দেওর—দ্বিজু। দ্বিজদাস দূর হইতে নমস্কার করিল। বন্দন দিদিকে প্রণাম করিয়া হাসিয়া বলিল, ও—ইনিই সেই ? যার জালায় জমিদারী বুঝি যায়। আমাকে চিঠিতে লিখেছিলে ? বংশ-ছাড়া, গোত্র-ছাড়া, ভয়ঙ্কর স্বদেশী ? অমন কথা তোকে আবার কবে লিখলুম ? এই ত সেদিন । এরই মধ্যে ভুলে গেলে ? সতী ঘাড় নাড়িয়া কহিল, ন, ওসব লিখিনি, তোর মনে নেই। দ্বিজদাস এতক্ষণ পর্য্যন্ত কি এক প্রকার সঙ্কোচের বশে যেন আড়ষ্ট হইয়াছিল । অনাত্মীয়, অপরিচিত যুবতী স্ত্রীলোকের সম্মুখে কি করা উচিত, কি বলিলে ভাল দেখায়, কিছুই স্থির করিতে পারিতেছিল না। ইতিপূর্বে কখনো স্থযোগও ঘটে নাই, প্রয়োজনও হয় নাই, কিন্তু এই নবাগত তরুণীর আশ্চর্য্য স্বচ্ছন্দতায় সে যেন একটা নূতন শিক্ষা লাভ করিল। তাহার অহেতুক ও অশোভন জড়তা এক মুহূর্তে কাটিয়া গিয়া সে এক অনাবিল আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করিল । মেয়েদেরও যে শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রয়োজন এ কথা সে বুদ্ধি দিয়া চিরদিনই স্বীকার করিত এবং মা ও দাদার সহিত তর্ক বাধিলে সে এই যুক্তিই দিত যে, স্ত্রীলোক হইলেও তাহারা মানুষ, স্বতরাং শিক্ষা ও স্বাধীনতায় তাহদের দাবী আছে। মূখ করিয়া তাহদের ঘরে বন্ধ করিয়া রাখা অন্যায়। কিন্তু আজ এই অতিথি মেয়েটির আকস্মিক পরিচয়ে সে চক্ষের পলকে প্রথম উপলব্ধি করিল যে, ঐ-সব মামূলী দাবী-দাওয়ার যুক্তির চেয়েও ঢ়ের বড় কথা এই যে, পুরুষের চরম ও পরম প্রয়োজনেই রমণীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রয়োজন। তাহাকে বঞ্চিত করিয়া পুরুষ কতখানি যে নিজেকে বঞ্চিত করিতেছে এ সত্য এত বড় স্পষ্ট করিয়া ইতিপূর্বে সে কখনো দেখে নাই। মেয়েটিকে উদেশ করিয়া হাসিমুখে কহিল, আপনার কথাই ঠিক, বৌদি ভুলে গেছেন। কিন্তু এ নিয়ে বাদামুবাদ করে লাভ নেই। এই বলিয়া সে ছদ্মগাষ্ঠীৰ্য্যে মুখ গষ্ঠীর করিয়া বলিল, বৌদি, তোমার জোরেই আমার সমস্ত জোর, আর তোমারই চিঠিতেই এই কথা ? বেশ, আমাকে তোমরা ত্যাগ কর, আর আমিও আমার সমস্ত অধিকার পরিত্যাগ 》总