পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নারায়ণী মুখ ফিরাইয়া রহিলেন । নেত্য কাছে ছিল, সে বলিল, দিদিমার এক কথা । ও কি কোনদিন এক ঘটি জল গড়িয়ে থেয়েচে যে, আজ রে’ধে থাবে ? সে অনেকদিনের দাসী, এসব ব্যাপার তাহার ভাল লাগিতেছিল না । মায়ের দেখাদেখি সুরধুনীও মাঝে মাঝে গিয়া বেড়ার ফাক দিয়া দেখিতেছিল। ঘণ্টা-খানেক পরে ছুটিয়া আসিয়া দিদির হাত ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিল—ও দিদি, দেখবে এস, রামদাদা-মা গো ! একেবারে র্কাচা ভাতগুলো খাচ্চে। কিছু নেই দিদি—একেবারে শুধু ভাতে, আচ্ছা দিদি, কাচা ভাত পেট কামড়াবে না ? নারায়ণী তাহার হাত ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া উঠিয়া গিয়া বিছানার উপর গুইয়া পড়িলেন। সে যে কত বড় দুঃখ, কত বড় ক্ষুধার তাড়নে এইগুলা থাইতে বলিয়াছে, সে কথা তাহার অগোচর রহিল না। দুপুরবেলা হামলালের খাওয়া হইয়া গেল, দিগম্বী ডাকাডাকি করিতে লাগিলেন, যা পারিস, দুটি খেয়ে নে নারাণি ! ওর তাড়সে জরের মত হয়েচে–ওতে খাওয়া চলে। আমি বলচি, ক্ষেতি হবে না । নারায়ণী মোটা চারটা আগাগোড়া মুড়ি দিয়া ভাল করিয়া শুইয়া বলিলেন, আমাকে বিরক্ত ক’রে না মা, তোমরা খাও গে । দিগম্বরী বলিলেন, ভাত না থাস, দু’খানা রুটি করে দি—ন হয়— নারায়ণী কহিলেন, না, কিছু না । দিগম্বর আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিলেন, ও আবার কি কথা, কাল থেকে উপোল করে আছিল, আজ দুটি না খেলে হবে কেন ? নারায়ণী জবাব দিলেন না । নেত্য আসিয়া বলিল, তুমি মিথ্যে বকে মরচ দিদিমা ! ঐখানে দাড়িয়ে একবেলা চেঁচালেও ওকে খাওয়াতে পারবে না। জর হয়েচে, একটু ঘুমোতে দাও । দিগম্বরী চলিয়া গেলেন, বলিতে বলিতে গেলেন, জানিনে বাপু, নাগ লে-টাগলে একটু জরভাব হয়, তাই বলে কি মানুষ উপোস করে পড়ে থাকে ? আমরা ত পারিনে । বৈকালে নারায়ণী আবার রান্নাঘরের বারান্দায় আসিয়া বসিলেন, এবং যতবার নেতার চোখে চোর্থে হইল ততবারই কি বলিতে গিয়া চাপিয়া গেলেন । রাম স্থল হইতে ফিরিয়া আসিয়া হাত-মুখ ধুইয়া দোকান হইতে মুড়িম্ভূকি কিনিয়া আনিল। খাইতে খাইতে গলা বড় করিয়া বলিল, কি আর ক্ষেতি হ’ল আমার ? ভাত খেয়ে ইস্কুলে গেলুম, অবার ফিরে এসে কেমন খাচ্চি। বেড়ার ওদিকে সকলেই রহিয়াছে তাহা সে বুঝিল, কিন্তু সকালের মত এখনও

    • Ե,