পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বন্দনার পিতা এতক্ষণ বিশেষ মনোযোগ করেন নাই, আলোচনার শেষের দিকটা কানে যাইতেই, সোজা হইয়া বসিয়া বলিলেন, না না, তামাসার কথা নয়,—এ ব্যাপার ট্রেনে প্রায়ই ঘটে খবরের কাগজে দেখতে পাওয়া যায়। তাই ত জোর-জবরদস্তির আমার ইচ্ছেই ছিল না, রাত্রের ট্রেনে গেলেই সব দিকে স্ববিধে হ’ত । বন্দনা কহিল, রাত্রের ট্রেনেও যদি মাতাল-সাহেব থাকত বাবা ? পিত কহিলেন, তা কি আর সত্যিই হয় রে ? তা হলে ত ভদ্রলোকের যাতায়াতই বন্ধ করতে হয়। এই বলিয়া তিনি একটা মোটা চুরুট ধরাইতে প্রবৃত্ত হইলেন। বন্দন আস্তে আস্তে বলিল, মুখুয্যেমশাই, ভদ্রলোকের সংজ্ঞা নিয়ে যেন বাবাকে জেরা করবেন না । বিপ্রদাস হাসিমুখে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, না। সে আমি বুঝেচি। আচ্ছ মুখুয্যেমশাই, ছেলে-বেলা গড়ের-মাঠে সাহেবদের সঙ্গে কখনো মারামারি করেচেন ? সত্যি বলবেন । " না, সে সৌভাগ্য কখনো ঘটেনি। বন্দনা কহিল, লোকে বলে, দেশের লোকের কাছে আপনি একটা terror শুনি, বাড়ির সবাই আপনাকে বাঘের মত ভয় করে। সত্যি ? কিন্তু শুনলে কার কাছে ? বন্দনা গলা খাট করিয়া বলিল, মেজদির কাছে । কি বলেন তিনি ? বলেন, ভয়ে গায়ের রক্ত জল হয়ে যায় । কি রকম জল ! মাতাল-সাহেব দেখলে আমাদের যেমন হয়, তেমনি ? বন্দন সহাস্তে মাথা নাড়িয়া বলিল, ই, অনেকটা ঐ রকম । বিপ্রদাস কহিল, ওটা দরকার। নইলে মেয়েদের শাসনে রাখা যায় না । তোমার বিয়ে হলে বিদ্যেটা ভায়াকে শিখিয়ে দিয়ে আসব। বদন কহিল, দেবেন। কিন্তু সব বিন্ধে সকলের বেলায় খাটে না এও জানবেন। মেজদি বরাবরই ভালমামুষ, কিন্তু আমি হলে আমাকেই সকলের ভয় করে চলতে ठू'७ । বিপ্রদাস বলিল, অর্থাৎ ভয়ে বাড়ি-মৃদ্ধ লোকের গায়ের রক্ত জল হয়ে যেত। খুব আশ্চৰ্য্য নয়। কারণ একট। বেলার মধ্যেই নমুনা যা দেখিয়ে এসেচ তাতে বিশ্বাস করতেই প্রবৃত্তি হয়। অন্ততঃ মা সহজে ভূলতে পারবেন না। বদন মনে মনে একটুখানি উত্তেজিত হইয়া উঠিল, কহিল, আপনার মা কি করেচেন্ন জানেন ? আমি প্রণাম করতে গেলুৰ, তিনি পিছিয়ে সরে গেলেন । - wకిషి