পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ষষ্ঠ সম্ভার).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সঙ্গে এক বিছানায় যিনি মানুষ করে তোলবার ভার দিয়েছিলেন, তিনিই এ-বিস্তে আমাকে দান করেছিলেন বাবা, অন্য কেউ নয়। সেই দিন থেকেই জানি মায়ের এই গভীর আত্ম-সম্মানবোধই কাউকে একটা দিনের জন্যে জানতে দেয়নি, তিনি আমার জননী নন, বিমাতা। বুঝতে পার এর অর্থ ? ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া পুনরায় সে বলিতে লাগিল, অভিবাদনের উত্তরে কে কতটুকু হাত তুললে, কতটুকু সরে দাড়াল, নমস্কারের প্রতি-নমস্কারে কে কতখানি মাথা নোয়ালে, এই নিয়ে মৰ্য্যাদার লড়াই সকল দেশেই আছে, অহঙ্কারের নেশার খোরাক তোমাদের পাঠ্য-পুস্তকের পাতায় পাতায় পাবে, কিন্তু মা না হয়েও পরের ছেলের মা হয়ে যেদিন মা আমাদের বৃহৎ পরিবারে প্রবেশ করলেন, সেদিন আশ্রিত আত্মীয়-পরিজনদের গলায় বিষের থলি যেন উপচে উঠল। কিন্তু যে বস্তু দিয়ে তিনি সমস্ত বিষ অমৃত করে তুললেন, সে গৃহকত্রীর অভিমান নয়, সে গৃহিণীপনার জবরদস্তি নয়, সে মায়ের স্বকীয় মৰ্য্যাদা । সে এত উচু যে তাকে কেউ লঙ্ঘন করতে পারলে না। কিন্তু এ তত্ত্ব আছে শুধু আমাদের দেশে। বিদেশীরা এ খবর ত জানে না, তারা খবরের কাগজের খবর দেখে বলে এদের দাসী, বলে অস্তঃপুরে শেকল-পরা বাদী। বাইরে থেকে হয়ত তাই দেখায়-দোষ তাদের দিইনে, কিন্তু বাড়ির দাস-দাসীরও সেবার নীচে অন্নপূর্ণার রাজ্যেশ্বরী মূৰ্ত্তি তাদের যদিও বা না চোখে পড়ে, তোমাদেরও কি পড়বে না ? বন্দন! অভিভূত-চক্ষে বিপ্রদাসের মুখের প্রতি চাহিয়া রহিল। ব্যারিস্টার সাহেব অকস্মাৎ জোর গলায় বলিয়া উঠিলেন, ট্রেন এতক্ষণে হাওড়া প্লাটফর্মে ইন করলে। বন্দনার পিতার বোধ করি তন্দ্ৰা আসিয়াছিল, চমকিয়া চাহিয়া কহিলেন, বঁাচা গেল । বন্দন মূছকণ্ঠে চুপি চুপি বলিল, আমার কলকাতায় নামতে আর যেন ভাল লাগচে না মুখুয্যেমশাই। ইচ্ছে হচ্ছে আপনার মার কাছে ফিরে যাই। গিয়ে বলি, মা, আমি ভাল করিনি, আমাকে মার্জন করুন। বিপ্রদাস শুধু হাসিল, কিছু বলিল না। স্টেশনে নামিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কোথায় যাবেন ? রায়সাহেব বলিলেন, গ্র্যাগু হোটেলেই ত বরাবর উঠি, তাদের তার করেও দিয়েচি—ঐখানেই উঠব । এই লোকটির স্বমুখে গ্র্যাণ্ড হোটেলের কথায় বন্দনার কেমন যেন আজ লজ্জা করিতে লাগিল । &