পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিন্দুর ছেলে বিন্দু চোখ তুলিয়া বলিল, ফের মুখের সামনে জবাব করে ! ভৈরব সে চাহনির স্বমুখ হইতে ছুটিয়া পলাইল। কদমকে পাঠাইয়া দিয়া বিন্দু বার-দুই এ-ঘর ও-ঘর করিয়া রান্নাঘরে আসিয়া ঢুকিল। বামুনঠাকরুণ এক বসিয়া রাধিতেছিল। বিন্দু একপাশে বসিয়া পড়িয়া বলিল, আচ্ছা মেয়ে, তোমাকেই সাক্ষী মানচি–সত্যিকথা বল মেয়ে, কার দোষ বেশি ? পাচিক বুঝিতে পারিল না, বলিল, কিসের মা ? বিন্দু বলিল, সেদিনের কথা গো! কি বলেছিলুম আমি ? শুধু বলেছিলুম, দিদি, অমূল্যকে এর মধ্যে টাকা দিয়েচ ? কেনা জানে ছেলেদের হাতে টাকাকড়ি দিতে নেই। বললেই ত হ’ত, অমূল্য কান্নাকাটি করেছিল, দিয়েচি, চুকে যেত। এতে, এত কথাই বা ওঠে কেন, আর এমন দিব্যি-দিলেশাই বা হয় কেন ? পাচটা ঘটি-বাটি একসঙ্গে থাকলে ঠেকাঠেকি লাগে, এ ত মানুষ ? তাই বলে এত বড় দিব্যি ! ঐ একটি বংশধর—তার নাম করে দিব্যি ? আমি বলচি মেয়ে তোমাকে, ইহজন্মে আমি আর ওব মুখ দেখব না। শত্রুর দিকে ফিরে চাইব ত ওর দিকে চোখ ফেরাব না । বামুনমেয়ে স্বভাবত অল্পভাষিণী, সে কি বলিবে বুঝিতে, না পারিয়া মৌন হইয়া রহিল । বিন্দুর দুই চোখ অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল । তাড়াতাড়ি মুছিয়া ফেলিয়া ভাঙ্গা-গলায় পুনরায় বলিল, রাগের মাথায় কে দিব্যি না করে মেয়ে ? তাই বলে জলস্পর্শ করলে না ! ছেলেটাকে পর্য্যন্ত আসতে দিলে না ! এইগুলো কি বড়র মত কাজ ? হাজার হোক আমি ছোট, বুদ্ধি কম, যদি তার পেটের মেয়ে হতুম, কি করত তা হলে ? আমি তেমনি ওর নাম কখন মুখে আনব না, তা তোমরা দেখো ! বামুনঠাকরুণ তথাপি চুপ করিয়া রহিল। বিন্দু বলিয়া উঠিল, আর ও-ই দিব্যি দিতে জানে, আমি জানিনে ? কাল যদি ও-বাড়িতে গিয়ে বলে আসি, এক বাটি বিষ পাঠিয়ে না দাও ত তোমার ওই দিব্যি রইল, কি হয় তা হলে ? আমি দু'দিন চুপ করে আছি, তার পরে হয় গিয়ে ঐ দিব্যি দিয়ে আসব, না হয় নিজেই একবাটি বিষ খেয়ে বলে যাব, দিদি পাঠিয়ে দিয়েছে। দেখি, পাঁচজনে ওকে ছিছি করে কি না ! ও জন্ম হয় কি না ! বামুনঠাকরুণ ভয় পাইয়া মৃদুস্বরে বলিল, ছি মা, ও-সব মতলব করতে নেই— ঝগড়া-বিবাদ চিরস্থায়ী হয় না—উনিও তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না, অমূল্যধনও পারবে না। এ ক'দিন সে যে কেমন করে আছে, আমরা তাই কেবল ভাবি । - & eס\ १भ-७a