পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তোমার কাছেই বলতে কেন সঙ্কোচ বোধ হচ্ছে না? এর কি কোন গৃঢ় কারণ নেই মনে কর ? মুরেশ বিক্ষিত হইয়া মুখ তুলিয়া চাহিয়া রহিল। কেদারবাবু বলিতে লাগিলেন, এ ভগবানের নির্দেশ—সাধ্য কি গোপন করি ? আমাকে বলতেই হবে যে ! বলিয়া চৌকির হাতলের উপর তিনি একটা চাপড় মারিলেন। কিন্তু তাহার এই বিস্তৃত ভূমিকা সত্ত্বেও তাহার দুর্দশ দুরবস্থাটা যে মেয়ের জন্য কিরূপ দাড়াইয়াছে, তাহা সুরেশ আন্দাজ করিতে পারিল না। কেদারবাবু তখন সবিস্তারে বর্ণনা করিতে লাগিলেন, কি করিয়া আঁহার অমন অর্ডার সাপ্লায়ের ব্যবসাটা নিছক প্রবঞ্চনা ও কৃতঘ্নতার আগুনে পুড়িয়া খৰ্ব্ব হইয়া গেলেও তিনি অবিচলিত ধৈর্ঘ্যের সঠিত দাড়াইয়াছিলেন, এবং ঋণের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়িয়া গেলেও একমাত্র কন্যার শিক্ষা-সম্বন্ধে কিছুমাত্র ব্যয়সঙ্কোচ করেন নাই । তিনি বলিতে লাগিলেন, গুটি পচ-ছয় ডিক্ৰীজারির ভয়ে তাহার আহার-বিহার বিষময় এবং খুচরা ঋণের তাগাদয় জীবন দুর্ভর হইয়া উঠিলেও তিনি মুখ ফুটিয়া কাহাকেও কিছু বলিতে পারেন না । অথচ এই কলিকতা সহরেক্ট এমন অনেক বন্ধু আছেন যাহারা টাকাটা আনয়াসেই ফেলিয় দিতে পারেন । একটুখানি থামিয়া কি যেন চিন্তা করিয়া বলিয়| উঠিলেন, কিন্তু তোমাকে যে জানালুম-–এতটুকু দ্বিধা-সঙ্কোস হ’ল না—একি এভগবানের সুস্পষ্ট আদেশ নয় ? বলিয়া পরম ভক্তিভরে দুই হাত কপালে ঠেকাইয়া নমস্কার করিলেন । মুরেশের ভগবানে বিশ্বাস ছিল না—সে বৃদ্ধের উচ্ছ্বাসে যোগ দিল না, বরঞ্চ তাহার মনটা কেমন যেন ছোট ইষ্টয় গেল । ধীরভাবে জিজ্ঞস করিল, আপনার ঋণ কত ? কেদারবাবু বলিনে, ঋণ ? আমার ব্যবসটা বজায় থাকলে কি এ আবার একটা ঋণ ! বড় জোর হাজার তিন-চার । তিনি আরও কি একটা বলিতে যাইতে ছিলেন, কিন্তু এমনি সময়ে অচলা বেয়ারার হাতে চায়ের সরঞ্জাম এবং নিজের হাতে জল-খাবারের থালা লইয়া প্রবেশ কঝিল । কেদারবাবু গরম কোকো এক চুমুকে খানিকট খাইয়া, হৰ্ষস্থচক একটা অব্যক্ত নিনাদ করিয়া পেয়ালাটা টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়া বলিলেন, দেখ সুরেশ, আমার ওপর ভগবানের এই একটা আশ্চৰ্য্য কৃপা আমি বরাবর দেখে আসচি যে, তিনি কখনো আমাকে অপ্রস্তুত করেন না । মহিমকে কথাটা বলি বলি করেও যে কেন বলতে পারতুম না—তিনি বরাবর আমার যেন মুখ চেপে ধরতেন—এতদিনে সেটা বোঝা গেল। বলিয়া আর একবার কপালে হাত ঠেকাইয়া তাহার অসীম দয়ার জন্য নমস্কার করিলেন । Vఫి