পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাতৃশ্রাদ্ধ

করে বলে উঠেছে: পিতা নোঽসি। তুমি আমাদের পিতা। এ কথা যে নিতান্তই হাস্যকর প্রলাপবাক্য এবং স্পর্ধার কথা হত যদি এ কেবলমাত্রই রূপক হত। কিন্তু, মানুষ এক জায়গায় পিতামাতাকে বিশেষভাবে অনন্তের মধ্যে দেখেছে, এবং অনন্তকে বিশেষভাবে পিতামাতার মধ্যে দেখেছে, সেইজন্যেই এমন দৃঢ় কণ্ঠে এত বড়ো অভিমানের সঙ্গে বলতে পেরেছে ‘পিতা নোঽসি’।

 মানুষ পিতামাতার মধ্য থেকে যে অমৃতের ধারা লাভ করেছে সেইটেকে অনুসরণ করতে গিয়ে দেখেছে কোথাও তার সীমা নেই, দেখেছে যেখান থেকে সূর্যনক্ষত্র তাদের নিঃশেষহীন আলোক পাচ্ছে, জীবজন্তু যেখান থেকে অবসানহীন প্রাণের স্রোতে ভেসে চলে আজ পর্যন্ত কোনো শেষে গিয়ে পৌছল না, সেই জগতের অনাদি আদিপ্রস্রবণ হতেই ওই অমৃতধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে; অনন্ত ওইখানে আমাদের কাছে যেমনি ধরা পড়ে গেছেন অমনি আমরা সেই দিকেই মুখ তুলে বলে উঠেছি ‘পিতা নোঽসি’— বলেছি ‘যাকেই পিতা বলে ডাকি-না কেন, তুমিই আমাদের পিতা’।

 ‘তুমি যে আমাদেরই’ অনন্তকে এমন কথা বলতে শিখলুম এইখান থেকেই। ‘তোমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অসংখ্য কারবার নিয়ে তুমি আছ সে কথা ভাবতে গেলেও ভয়ে মরি, কিন্তু ধরা পড়ে গেছ এইখানেই—দেখেছি তোমাকে পিতার মধ্যে, দেখেছি তোমাকে মাতার মধ্যে, তাই তুমি যত বড়োই হও-না কেন, পৃথিবীর এই এক কোণে দাড়িয়ে বলেছি: তুমি আমাদের পিতা। পিতা নোঽসি। আমাদের তুমি আমাদের। আমার তুমি আমার।’

 এমন করে যদি তাঁকে না পেতুম তবে তাঁকে খুঁজতে যেতুম কোন্

১২১