পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাতৃশ্রাদ্ধ

আসবাব-আয়োজনও বাহুল্য হয়ে ওঠে, তখন জ্ঞানের মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওজন করে হিসেব করে চিনতে হয় না। চিরকাল তাঁর যে চেনাই রয়েছে, সেইজন্যে তাঁর আলো যেখানে পড়ে সেখানে কেউ কাউকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে না।

 শিশু মা-বাপের কোলেই জগৎকে যখন প্রথম দেখলে তখন কেউ তাকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে না—বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের থেকে একটি ধ্বনি এল ‘এসো এসো’। সেই ধ্বনি মা-বাপের কণ্ঠের ভিতর দিয়ে এল, কিন্তু সে কি মা-বাপেরই কথা? সেটি যাঁর কথা তাঁকেই মানুষ বলেছে ‘পিতা নোঽসি’।

 শিশু জন্মালো আনন্দের মধ্যে, কেবল কার্যকারণের মধ্যে নয়। তাকে নিয়ে মা-বাপের খুশি, মা-বাপকে নিয়ে তার খুশি। এই আনন্দের ভিতর দিয়ে জগতের সঙ্গে তার সম্বন্ধ আরম্ভ হল। এই-যে আনন্দ এ আনন্দ ছিল কোথায়? এ আনন্দ আসে কোথা থেকে? যে পিতামাতার ভিতর দিয়ে শিশু একে পেয়েছে সেই পিতামাতা একে পাবে কোথায়? এ কি তাদের নিজের সম্পত্তি? এই আনন্দ জীবনের প্রথম মুহূর্তেই যেখান থেকে এসে পৌঁছল সেইখানে মানুষের চিত্ত গিয়ে যখন উত্তীর্ণ হয় তখনি এত বড়ো কথা সে অতি সহজেই বলে, ‘পিতা নোঽসি। তুমিই আমার পিতা, আমার মাতা।’

 আমাদের এই মন্দিরের একজন উপাসক আমাকে জানিয়েছেন, আজ তাঁর মাতার শ্রাদ্ধদিন। আমি তাঁকে বলছি, আজ তাঁর মাতাকে খুব বড়ো করে দেখবার দিন, বিশ্বমাতার সঙ্গে তাঁকে মিলিয়ে দেখবার দিন।

 মা যখন ইন্দ্রিয়বোধের কাছে প্রত্যক্ষ ছিলেন তখন তাঁকে এত

১২৩