পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জাগরণ

অহংযন্ত্রটার অচল খোঁটার মধ্যে ধাঁধা থেকে মোচড় খাওয়া— কোনো অর্থ নেই, কোনো পরিণাম নেই, কেবলই দিনযাপন মাত্র।

 কিন্তু, যিনি আমাদের বাজিয়ে তিনি কেবলই কি কঠিন হাতে নিয়মের খোঁটায় চড়িয়ে পাক দিয়ে দিয়ে আমাদের সুরই বাঁধছেন? তা তো নয়। সঙ্গে-সঙ্গে মুহূর্তে-মুহূর্তে ঝংকারও দিচ্ছেন। কেবলই নিয়ম? তা তো নয়। তার সঙ্গে-সঙ্গেই আনন্দ। প্রতিদিন খেতে হচ্ছে বটে পেটের দায়ের অত্যন্ত কঠোর নিয়মে, কিন্তু তার সঙ্গেসঙ্গেই মধুর স্বাদটুকুর রাগিণী রসনায় রসিত হয়ে উঠছে। আত্মরক্ষার বিষম চেষ্টায় প্রত্যেক মুহূর্তেই বিশ্বজগতের শতসহস্র নিয়মকে প্রাণপণে মানতে হচ্ছে বটে, কিন্তু সেই মেনে চলবার চেষ্টাতেই আমাদের শক্তির মধ্যে আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে উঠছে। দায়ও যেমন কঠোর খুশিও তেমনি প্রবল।

 সেই আমাদের ওস্তাদের হাতে বাজবার সুবিধেই হচ্ছে ওই। তিনি সব সুরের রাগিণীই জানেন। যে-ক’টি তার বাঁধা হচ্ছে তাতে যে-ক’টি সুর বাজে কেবলমাত্র সেই ক’টি নিয়েই তিনি রাগিণী ফলিয়ে তুলতে পারেন। পাপী হোক, মূঢ় হোক, স্বার্থপর হোক, বিষয়ী হোক,যে হোক-না, বিশ্বের আনন্দের একটা সুরও বাজে না এমন চিত্ত কোথায়? তা হলেই হল; সেই সুযোগটুকু পেলেই তিনি আর ছাড়েন না। আমাদের অসাড়তমেরও হৃদয়ে প্রবল ঝঞ্চনার মাঝখানে হঠাৎ এমন একটা-কিছু সুর বেজে ওঠে যার যোগে ক্ষণকালের জন্যে নিজের চার দিককে ছাড়িয়ে গিয়ে চিরন্তনের সঙ্গে মিলে যাই। এমন একটা-কোনো সুর, নিজের প্রয়োজনের সঙ্গে অহংকারের সঙ্গে যার মিল নেই— যার মিল আছে আকাশের নীলিমার সঙ্গে প্রভাতের আলোর

১৫৯