পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পিতার বোধ আছে ? আমরা এত দিন ধরে তাকে কোন ভরসা দিয়ে এলুম ? বাহিরের বৈঠকখানায় আমরা ঝাড়লণ্ঠন খাটিয়ে দিলুম, কিন্তু অস্তরের ঘরের কোণটিতে আমরা সন্ধ্যার প্রদীপ জালালুম না। রাত্রি গভীর হল, অন্ধকার নিবিড় হয়ে এল ; সেই তার একলা ঘরের নিবিড় অন্ধকারের মাঝখানে ধুলায় বসে সে যখন কেঁদে উঠল আমরা তখন প্রহরে প্রহরে কী বলে তাকে আশ্বাস দিলুম ! তার সেই মৰ্মভেদী রোদনে আমাদের নিশীথরাত্রির প্রমোদসভায় যখন ক্ষণে ক্ষণে আমাদের বড়োই ব্যাঘাত করতে লাগল, আমাদের মত্ততার মাঝখানে তার সেই গভীর ক্ৰন্দন আমাদের নেশাকে যখন ক্ষণে ক্ষণে ছুটিয়ে দেবার উপক্রম করলে, তখন আমরা তাকে কোনোমতে থামিয়ে রাখবার জন্যে তার দরজার বাহিরে দাড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে তাকে বলে এসেছি, ভয় নেই তোমার, আমি আছি । মনে করেছি, এই বুঝি তার সকলের চেয়ে বড়ো অভয়মন্ত্র যে ‘আমি আছি । নিজের সমস্ত ধনসম্পদ মানমর্যাদাকে একটা মমতার সূত্রে জপমালার মতো গেথে ফেলে তার হাতে দিয়ে বলেছি,“এইটেকেই তুমি দিনরাত্রি বারবার করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কেবলই একমনে জপ করতে থাকে, আমি, আমি, আমি । আমি সত্য, আমি বড়ো, আমি প্রিয়।’ তাই নিয়ে সে জপছে বটে ‘আমি আমি আমি, কিন্তু তার চোখ দিয়ে জল পড়া আর কিছুতেই থামছে না । তার ভিতরকার এ কোন একটা মহাবিষাদ অশ্রুবিন্দুর গুটি ফিরিয়ে ফিরিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই জপে যাচ্ছে, ‘না, না, না। নয়, নয়, নয়।’ কোন তাপসিনীর করুণ বীণায় এমন উদাস-করা ভৈরবীর স্বরে সমস্ত আকাশকে কাদিয়ে কাদিয়ে তুলছে ব্যর্থ হল, ব্যর্থ হল রে— সকালবেলাকার আলোক ব্যর্থ হল, রাত্রি ఇన్స్)