পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পিতার বোধ সেইটেকেই সে আপনার প্রতাপ বলে গণ্য করে । কিন্তু, আমার অস্তরের নিত্য মানুষটি তো দিনরাত্রি মাথা উচু করে বেড়াতে চায় নি ; সে নমস্কার করতেই চেয়েছিল। তার সমস্ত, আনন্দ নমস্কারের দ্বারা বিশ্বজগতে প্রবাহিত হয়ে যেতে চেয়েছে ; নমস্কারের দ্বারা তার আত্মসমর্পণ পরিপূর্ণ হতে চায় ! নমস্কারের দ্বারা সে আপনাকে সেই জায়গাতেই প্রসারিত করে যেখানে তুমি তোমার পা রেখেছ, যেখানে তোমার চরণাশ্রয় করে জগতের ছোটো বড়ো সকলেই এক জায়গায় এসে মিলেছে— যেখানে দরিদ্রকে ধনী দ্বারের বাইরে দাড় করাতে পারে না, শূদ্রকে ব্রাহ্মণ দূরে সরিয়ে রেখে দিতে পারে না— সেই তো সকলের চেয়ে নীচের জায়গা, সেই তো সকলের চেয়ে প্রশস্ত জায়গা, সেই তোমার অনন্তপ্রসারিত পাদপীঠ । আমার অন্তরাত্মা পরিপূর্ণ নমস্কারের দ্বারা সেই সর্বজনভোগ্য মহাপুণ্যস্থানের অধিকারটি পেতে ব্যাকুল হয়ে আছে । যে স্থানটি নিয়ে রাজা তার কাছ থেকে খাজনা দাবি করবে না, পাশের মানুষ তার সঙ্গে লাঠালাঠি করতে আসবে না, সত্য নমস্কারটিই যে স্থানের একমাত্র সত্য দলিল, সেই সম্পত্তিই আমার অন্তরাত্মার পৈতৃক সম্পত্তি। জল যখন তাপের দ্বারা হাল্কা হয়ে যায় তখনই সে বাষ্প হয়ে উপরে চড়তে থাকে ; তখনই সে পৃথিবীর সমস্ত জলরাশির সঙ্গে আপনার সম্বন্ধকে পৃথক করে ফেলে ; তখনই সে ব্যর্থ হয়ে, স্ফীত হয়ে উড়ে বেড়ায় ; তখনই সে আলোককে আবৃত করে । কিন্তু, তৎসত্ত্বেও সকলেই জানে, জলের যথার্থ স্বধৰ্মই হচ্ছে সে আপনার সমতলতাকেই চায়। সেই সমতলতাকে চাওয়ার মধ্যেই তার নমস্কারের প্রার্থনা ৷ সেই নমস্কারের দ্বারাই সে রসধারায় সকল দিকে প্রবাহিত হয়, পৃথিবীর RR3)