পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন যে শক্তির • সঙ্গে আত্মার যোগ নেই তাকে প্রসন্ন রাখবার জন্য বলির পণ্ড নিয়ে তখন ভয়াতুর মানুষ একত্র মিলেছে। তখনকার সেই ভয়ের পূজা তো উৎসব নয়। ডাকাতের হাতে পড়লে যেমন ভীরু বলে উঠে ‘আমার যা আছে সব দিচ্ছি, কিন্তু আমায় প্রাণে মেরে না, তেমনি পৃথিবীর মধ্যে অদৃশ্ব শক্তিকে খুশি রাখবার জন্য সেদিন মানুষ বলেছিল, ‘আমি তোমাকে সব দেব, তুমি আমায় সংকটে ফেলো না । কিন্তু, সে তো আনন্দের দান নয়। আনন্দের দেবতাকে উপলব্ধি করলে আর ভয় নেই। কারণ, এই আনন্দের দেবতাই যে ‘আরো’– এই তো সকলকে ছাড়িয়ে যায়— যা-কিছু পেয়েছি বুঝেছি তার চেয়ে তিনি আরো ; যা পাই নি, হারিয়েছি, তার চেয়েও তিনি আরো ; তিনি ধনের চেয়ে আরো ; মানের চেয়ে আরো ; আরামের চেয়ে আরো । তাই তো সেই আরো'র পূজায়, আরো’র উৎসবে মানুষ আনন্দে বলেছে, ‘আমার ধন নাও, প্রাণ নাও, সম্মান নাও । অন্তরে এবং বাহিরে মানুষের এই-যে আরো’কে জানা এ বড়ো আরামের জানা নয়। যেদিন মানুষ জেনেছে যে সে পশু নয়, তার দেবতা পাশব নয়, সে বড়ো, তার দেবতা বড়ো, সেদিন সে যে পরম দুঃখকে স্বীকার করে নিয়েছে । সেদিন মানুষ যে বিজয়ী, মাহুষ যে বীর— তাই সেই বিজয়লাভের জয়োৎসব সেদিন হবে না! পাখি যেমন অন্ধকারের প্রান্তে জ্যোতির স্পর্শমাত্রে অকারণ আনন্দে গেয়ে ওঠে, তেমনি যেদিন পরম জ্যোতি তাকে স্পশ করেন সেদিন মানুষও গেয়ে ওঠে । সেদিন সে বলে, “আমি অমৃতের পুত্র। সে বলে, ‘বেদাহমেতং । আমি পেয়েছি।’ সেই পাওয়ার জোরে নিজের মধ্যে সেই অমৃতকে অনুভব করে ভয়কে সে আর ভয় করে 8 չԵr