পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রসের ধর্ম

নেমে এসে সকলকে তাঁর ডাক দিতে হয়— সেই ডাকের মধ্যে কত করুণা, কত বেদনা, কত কোমলতা! স্নেহের আনন্দভারে দুর্বল ক্ষুদ্র শিশুর কাছে পিতামাতা যেমন নত হয়ে পড়েন জগতের ঈশ্বর তেমনি করেই আমাদের দিকে নত হয়ে পড়েছেন। এইটেই হচ্ছে আমাদের কাছে সকলের চেয়ে বড়ো কথা। তাঁর নিয়ম অটল, তাঁর শক্তি অসীম, তাঁর ঐশ্বর্ষ অনন্ত, এ-সব কথা আমাদের কাছে ওর চেয়ে ছোটো। তিনি নত হয়ে সুন্দর হয়ে ভাবে-ভঙ্গীতে হাসিতে-গানে রসে-গন্ধে রূপে আমাদের সকলের কাছে আপনাকে দান করতে এসেছেন এবং আপনার মধ্যে আমাদের সকলকে নিতে এসেছেন, এইটেই হচ্ছে আমাদের পক্ষে চরম কথা—তাঁর সকলের চেয়ে পরম পরিচয় হচ্ছে এইখানেই।

 জগতে ঈশ্বরের এই-যে দুইটি পরিচয়, একটি অটল নিয়মে, আরএকটি সুনম্র সৌন্দর্যে— এর মধ্যে নিয়মটি আছে গুপ্ত আর সৌন্দর্যটি আছে তাকে ঢেকে। নিয়মটি এমন প্রচ্ছন্ন যে সে যে আছে তা আবিষ্কার করতে মানুষের অনেক দিন লেগেছিল, কিন্তু সৌন্দর্য চিরদিন আপনাকে ধরা দিয়েছে। সৌন্দর্য মিলবে ব’লেই, ধরা দেবে ব’লেই সুন্দর। এই সৌন্দর্যের মধ্যেই, রসের মধ্যেই, মিলনের তত্ত্বটি রয়েছে।

 ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে যখন কাঠিন্যই বড়ো হয়ে ওঠে তখন সে মানুষকে মেলায় না, মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে। এইজন্যে কৃচ্ছসাধনকে যখন কোনো ধর্ম আপনার প্রধান অঙ্গ করে তোলে, যখন সে আচারবিচারকেই মুখ্য স্থান দেয়, তখন সে মানুষের মধ্যে ভেদ আনয়ন করে; তখন তার নীরস কঠোরতা সকলের সঙ্গে তাকে মিলতে বাধা দেয়, সে আপনার নিয়মের মধ্যে নিজেকে অত্যন্ত স্বতন্ত্র ক’রে আবদ্ধ ক’রে

৫৯