পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুহাহিত

মধ্যে যখন ভক্তির আবির্ভাব হয় তখনই সংসারে যেখানে যা-কিছু সমস্ত বজায় থেকেও মানুষের সকল সমস্যার মীমাংসা হয়ে যায় তখন কর্মের মধ্যে সে আনন্দ ও দুঃখের মধ্যে সে গৌরব অনুভব করে; তখন কর্মই তাকে মুক্তি দেয় এবং দুঃখ তার ক্ষতির কারণ হয় না।

গুহাহিত

 উপনিষৎ তাঁকে বলেছেন: গুহাহিতং গহ্বরেষ্ঠং। অর্থাৎ, তিনি গুপ্ত, তিনি গভীর। তাঁকে শুধু বাইরে দেখা যায় না, তিনি লুকানো আছেন; বাইরে যা-কিছু প্রকাশিত তাকে জানবার জন্যে আমাদের ইন্দ্রিয় আছে— তেমনি যা গূঢ়, যা গভীর, তাকে উপলব্ধি করবার জন্যেই আমাদের গভীরতর অন্তরিন্দ্রিয় আছে। তা যদি না থাকত তা হলে সে দিকে আমরা ভুলেও মুখ ফিরাতুম না; গহনকে পারার জন্যে আমাদের তৃষ্ণার লেশও থাকত না।

 এই অগোচরের সঙ্গে যোগের জন্যে আমাদের বিশেষ অন্তরিন্দ্রিয় আছে ব’লেই মানুষ এই জগতে জন্মলাভ ক’রে কেবল বাইরের জিনিসে সন্তুষ্ট থাকে নি। তাই সে চারি দিকে খুঁজে খুঁজে মরছে, দেশবিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে কিছুতে থামতে দিচ্ছে না। কোথা থেকে সে এই খুঁজে বের করবার পরোয়ানা নিয়ে সংসারে এসে উপস্থিত হল? যা-কিছু পাচ্ছি তার মধ্যে আমরা সম্পূর্ণকে পাচ্ছি নে, যা পাচ্ছি নে তার মধ্যেই আমাদের আসল পাবার সামগ্রীটি আছে— এই একটি সৃষ্টিছাড়া প্রত্যয় মানুষের মনে কেমন করে জন্মালো?

 পশুদের মনে তো এই তাড়নাটি নেই। উপরে যা আছে তারই

৬৭