পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুহাহিত

আমাদের বাইরের মানুষটা তো দিনরাত ঘুরে বেড়াচ্ছে; কিন্তু আমাদের অন্তরতর গুহাহিত তপস্বী সে-সমস্ত কিছু চায় না ব’লেই একাগ্রমনে তাঁর দিকে চলেছে। তুমি যদি তাঁকে চাও তবে গুহার মধ্যে প্রবেশ করেই তাঁর সাধনা করো— এবং যখন তাঁকে পাবে, তোমার গুহাশয়রূপেই তাঁকে পাবে; অন্য রূপে যে তাঁকে চায় সে তাঁকেই চায় না, সে কেবল বিষয়কেই অন্য একটা নাম দিয়ে চাচ্ছে। মানুষ সকল পাওয়ার চেয়ে যাঁকে চাচ্ছে তিনি সহজ বলেই তাঁকে চাচ্ছে না; তিনি ভূমা বলেই তাঁকে চাচ্ছে। যিনি ভূমা সর্বত্রই তিনি গুহাহিতং—কি সাহিত্যে, কি ইতিহাসে, কি শিল্পে, কি ধর্মে, কি কর্মে।

 এই যিনি সকলের চেয়ে বড়ো, সকলের চেয়ে গভীর, কেবলমাত্র তাঁকে চাওয়ার মধ্যেই একটা সার্থকতা আছে। সেই ভূমাকে আকাঙ্ক্ষা করাই আত্মার মাহাত্ম্য—‘ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি’ এই কথাটি যে মানুষ বলতে পেরেছে এতেই তার মনুষ্যত্ব। ছোটোতে তার সুখ নেই, সহজে তার সুখ নেই, এইজন্যেই সে গভীরকে চায়। তবু যদি তুমি বল ‘আমার হাতের তেলোর মধ্যে সহজকে এনে দাও’, তুমি আর-কিছুকে চাচ্ছ।

 বস্তুত, যা সহজ, অর্থাৎ যাকে আমরা অনায়াসে দেখছি, অনায়াসে শুনছি, অনায়াসে বুঝছি, তার মতো কঠিন আবরণ আর নেই। যিনি গভীর তিনি এই অতিপ্রত্যক্ষগোচর সহজের দ্বারাই নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন। বহুকালের বহু চেষ্টায় এই সহজ দেখাশোনার আবরণ ভেদ করেই মানুষ বিজ্ঞানের সত্যকে, দর্শনের তত্ত্বকে দেখেছে— যা-কিছু পাওয়ার মতো পাওয়া তাকে লাভ করেছে।

 শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্রেও মানুষ বহু সাধনায় আপনার সহজ

৭৩