পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
শান্তিনিকেতন

মধ্যে সম্পূর্ণ ধরা দিয়ে যেন বলতে পারি, ‘আমার সব মিটেছে, আমি আর কিছুই চাই নে।’

 ১৬ পৌষ ১৩১৫

প্রেমের অধিকার

কাল রাত্রে এই গানটা আমার মনের মধ্যে বাজছিল—

নাথ হে, প্রেমপথে সব বাধা ভাঙিয়া দাও।
মাঝে কিছু রেখো না, থেকো না দূরে।
নির্জনে সজনে অন্তরে বাহিরে নিত্য তোমারে হেরিব,
সব বাধা ভাঙিয়া দাও।

 কিন্তু, এ কেমন প্রার্থনা! এ প্রেম কার সঙ্গে? মানুষ কেমন করে এ কথা কল্পনাতে এনেছে এবং মুখে উচ্চারণ করেছে যে বিশ্বভুবনেশ্বরের সঙ্গে তার প্রেম হবে?

 বিশ্বভুবন বলতে কতথানি বোঝায় এবং তার তুলনায় একজন মানুষ যে কত ক্ষুদ্র সে কথা মনে করলে যে মুখ দিয়ে কথা সরে না। সমস্ত মানুষের মধ্যে আমি ক্ষুদ্র, আমার সুখ দুঃখ কতই অকিঞ্চিৎকর। সৌরজগতের মধ্যে সেই মানুষ একমুষ্টি বালুকার মতো যৎসামান্য, এবং সমস্ত নক্ষত্রলোকের মধ্যে এই সৌরজগতের স্থান এত ছোটো যে অঙ্কের দ্বারা তার গণনা করা দুঃসাধ্য।

 সেই সমস্ত অগণ্য অপরিচিত লোকলোকান্তরের অধিবাসী এই মুহূর্তেই সেই বিশ্বেশ্বরের মহারাজ্যে তাদের অভাবনীয় জীবনযাত্রা বহন করছে। এমন-সকল জ্যোতিষ্কলোক অনন্ত আকাশের গভীরতার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে রয়েছে যার আলোক যুগযুগান্তর হতে অবিশ্রাম যাত্রা করে আজও আমাদের দূরবীক্ষণ-ক্ষেত্রে এসে প্রবেশ করে নি। সেই-