পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেমের অধিকার
৯৯

বেরিয়ে যায়। কিন্তু, আমার এই আমিটুকু একেবারে লাখেরাজ, ওইখানেই বন্ধুর মন্দির কিনা— আমার সঙ্গে তাঁর কথা এই যে, ‘তুমি ইচ্ছা করে আমাকে যা দেবে তাই নেব, যদি না দাও তবু আমার যা দেবার তার থেকে বঞ্চিত করব না।’

 এমন যদি না হত তবে তাঁর জগৎরাজ্যের একলা রাজা হয়ে তাঁর আনন্দ কী হত? কোথাও যাঁর কোনো সমান নেই তিনি কী ভয়ংকর একলা, কী অনস্ত একলা! তিনি ইচ্ছা করে কেবল প্রেমের জোরে এই একাধিপত্য এক জায়গায় পরিত্যাগ করেছেন। তিনি আমার এই আমিটুকুর কুঞ্জবনে বিশেষ করে নেমে এসেছেন, বন্ধু হয়ে আপনি ধরা দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, ‘আমার চন্দ্রসূর্যের সঙ্গে তোমার নিজের দামের হিসাব করতে হবে না। কেননা, ওজন-দরে তোমার দাম নয়। তোমার দাম আমার আনন্দের মধ্যে, তোমার সঙ্গেই আমার বিশেষ প্রেম বলেই তুমি তুমি হয়েছ।’

 এইখানেই আমার এত গৌরব যে তাঁকে সুদ্ধ আমি অস্বীকার করতে পারি। বলতে পারি, ‘আমি তোমাকে চাই নে।’ সে কথা তাঁর ধূলিজলকে বলতে গেলে তারা সহ্য করে না, তারা তখনই আমাকে মারতে আসে। কিন্তু, তাঁকে যখন বলি ‘তোমাকে আমি চাই নে, আমি টাকা চাই, খ্যাতি চাই’, তিনি বলেন ‘আচ্ছা বেশ’। বলে চুপ করে সরে বসে থাকেন।

 এ দিকে কখন এক সময়ে হুঁশ হয় যে, আমার আত্মার যে নিভৃত নিকেতন সেখানকার চাবি তো আমার খাতাঞ্জির হাতে নেই, টাকাকড়ি ধনদৌলত তো সেখানে কোনোমতে পৌঁছোয় না। ফাঁক থেকেই যায়। সেখানকার সেই একলা ঘরটি জগতের আর-একটি মহান একলা ছাড়া কেউ কোনোমতেই ভরাতে পারে না। যেদিন ব পারব ‘আমার টাকায় কাজ নেই, খ্যাতিতে কাজ নেই, কিছুতে কাজ নেই,