পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রার্থনার সত্য
১০৯

 অতএব, হৃদয় আপনাকে জানে বলেই নিশ্চয় জানে, তার একটি পরিপূর্ণ কৃতার্থতা অনন্তের মধ্যে আছে। ইচ্ছা কেবল তার দিকেই আছে তা নয়, অন্য দিকেও আছে— অন্য দিকে না থাকলে সে নিমেষকালও থাকত না— এতটুকু কণামাত্রও থাকত না যাতে নিশ্বাসপ্রশ্বাসরূপ প্রাণের ক্রিয়াটুকুও চলতে পারে। সেইজন্যেই উপনিষৎ এত জোর করে বলেছেন: কোহ্যেবান্যাৎ ক: প্রাণ্যাৎ যদেষ আকাশ আনন্দো ন স্যাৎ, এষ হ্যেবানন্দয়তি। কেই বা শরীরের চেষ্টা করত, কেই বা প্রাণধারণ করত, যদি আকাশে এই আনন্দ না থাকতেন—ইনিই আনন্দ দেন।

 ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছার মাঝখানে দৌত্য-সাধন করে প্রার্থনা। দুই ইচ্ছার মাঝখানে যে বিচ্ছেদ আছে সেই বিচ্ছেদের উপরে ব্যাকুলবেশে দাঁড়িয়ে আছে ওই প্রার্থনাদূতী। এইজন্যে অসাধারণ সাহসের সঙ্গে বৈষ্ণব বলেছেন যে, জগতের বিচিত্র সৌন্দর্যে ভগবানের বাঁশির যে নানা সুর বেজে উঠছে সে কেবল আমাদের জন্যে তাঁর প্রার্থনা— আমাদের হৃদয়কে তিনি এই অনির্বচনীয় সংগীতে ডাক দিয়ে চাচ্ছেন, সেইজন্যেই তো এই সৌন্দর্যসংগীত আমাদের হৃদয়ের বিরহবেদনাকে জাগিয়ে তোলে।

 সেই ইচ্ছাময় এমনি মধুর স্বরে যেখানে আমাদের ইচ্ছাকে চাচ্ছেন সেখানে তাঁর সমস্ত জোরকে একেবারে সম্বরণ করেছেন— যে প্রচণ্ড জোরে তিনি সৌরজগৎকে সূর্যের সঙ্গে অমোঘরূপে বেঁধে দিয়েছেন, সেই জোরের লেশমাত্র এখানে নেই— সেইজন্যে এমন করুণ, এমন মধুর সুরে, এমন নানা বিচিত্র রসে বাঁশি বাজছে; আহ্বানের আর অস্ত নেই।

 তাঁর এমন আহ্বানে আমাদের মনের প্রার্থনা কি জাগবে না? সে কি তার বিরহের ধূলি-আসনে লুটিয়ে কেঁদে উঠবে না? অসত্য