পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিধান
১১১

বন্ধু হবেনই। আমাতে যদি তাঁর আনন্দ না থাকত তবে তো আমি থাকতুমই না। আবার, ‘স বিধাতা’। বিধাতা আর দ্বিতীয় কেউ নয়—যিনি জনিতা তিনিই বন্ধু, বিধানকর্তাও তিনি। অতএব বিধান যাই হোক, মূলে কোনো ভয় নেই।

 কিন্তু, বিধান জিনিসটা তো খামখেয়ালি হলে চলে না। আজ একরকম কাল অন্যরকম, আমার পক্ষে একরকম অন্যের পক্ষে অন্যরকম, কখন কিরকম তার কোনো স্থিরতা নেই— এ তো বিধান নয়। বিধান যে বিশ্ববিধান।

 এই বিধানের অবিচ্ছিন্ন সূত্রে এই পৃথিবীর ধূলি থেকে নক্ষত্রলোক পর্যন্ত একসঙ্গে গাঁথা রয়েছে। আমার সুখসুবিধার জন্য যদি বলি ‘তোমার বিধানের সূত্র এক জায়গায় ছিন্ন করে দাও, এক জায়গায় অন্য-সকলের সঙ্গে আমার নিয়মের বিশেষ পার্থক্য করে দাও’, তা হলে বস্তুত বলা হয় যে, ‘এই কাদাটুকু পার হতে আমার কাপড়ে দাগ লাগছে, অতএব এই ব্রহ্মাণ্ডের মণিহারের ঐক্যসূত্রটিকে ছিঁড়ে সমস্ত সূর্যতারাকে রাস্তায় ছড়িয়ে ফেলে দাও।’

 এই বিধান জিনিসটা কারও একলার নয় এবং কোনো-এক খণ্ড সময়ের নয়— এই বিশ্ববিধানের যোগেই সমষ্টির সঙ্গে আমরা প্রত্যেকে যুক্ত হয়ে আছি এবং কোনো কালে সে যোগের বিচ্ছেদ নেই। উপনিষদ বলেছেন, যিনি বিশ্বের প্রভু তিনি ‘যাথাতথ্যতোহর্থান্ ব্যদধাৎ শাশ্বতীভ্য সমাভ্যঃ’। তিনি নিত্যকাল হতে এবং নিত্যকালের জন্য সমস্তই যথার্থরূপে বিধান করছেন। এই বিধানের মূলে শাশ্বতকাল— এ বিধান অনাদি অনন্ত কালের বিধান, তার পরে আবার এই বিধান ‘যাথাতথ্যত:’ বিহিত হচ্ছে; এর আদ্যোপান্তই যথাতথ, কোথাও ছেদ নেই, অসংগতি নেই। আধুনিক বিজ্ঞানশাস্ত্র বিশ্ববিধান সম্বন্ধে এর চেয়ে জোর করে এবং পরিষ্কার করে কিছু বলে নি।