পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
শান্তিনিকেতন

 কিন্তু, শুধু তাই যদি হয়, যদি কেবল অমোঘ নিয়মের লৌহসিংহাসনে তিনি কেবল বিধাতারূপেই বসে থাকেন, তা হলে তো সেই বিধাতার সামনে আমরা কাঠ-পাথর ধূলি-বালিরই সমান হই। তা হলে তো আমরা শিকলে বাঁধা বন্দী।

 কিন্তু, তিনি শুধু তো বিধাতা নন, ‘স এব বন্ধু’, তিনিই যে বন্ধু।

 বিধাতার প্রকাশ তো বিশ্বচরাচরে দেখছি, বন্ধুর প্রকাশ কোন্ খানে? বন্ধুর প্রকাশ তো নিয়মের ক্ষেত্রে নয়—সে প্রকাশ আমার অন্তরের মধ্যে প্রেমের ক্ষেত্রে ছাড়া আর কোথায় হবে?

 বিধাতার কর্মক্ষেত্র এই বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে, আর বন্ধুর আনন্দনিকেতন আমার জীবাত্মায়।

 মানুষ এক দিকে প্রকৃতি আর-এক দিকে আত্মা— এক দিকে রাজার খাজনা জোগায়, আর-এক দিকে বন্ধুর ডালি সাজায়। এক দিকে সত্যের সাহায্যে তাকে মঙ্গল পেতে হয়, আর-এক দিকে মঙ্গলের ভিতর দিয়ে তাকে সুন্দর হয়ে উঠতে হয়।

 ঈশ্বরের ইচ্ছা যে দিকে নিয়মরূপে প্রকাশ পায় সেই দিকে প্রকৃতি, আর ঈশ্বরের ইচ্ছা যে দিকে আনন্দরূপে প্রকাশ পায় সেই দিকে আত্মা। এই প্রকৃতির ধর্ম বন্ধন, আর আত্মার ধর্ম মুক্তি। এই সত্য এবং আনন্দ, বন্ধন এবং মুক্তি, তাঁর বাম এবং দক্ষিণ বাহু। এই দুই বাহু দিয়েই তিনি মানুষকে ধরে রেখেছেন।

 যে দিকে আমি ইঁট কাঠ গাছ পাথরের সমান সেই সাধারণ দিকে ঈশ্বরের সর্বব্যাপী নিয়ম কোনোমতেই আমাকে সাধারণ থেকে লেশমাত্র তফাত হতে দেয় না, আর যে দিকে আমি বিশেষ ভাবে আছি সেই স্বাতন্ত্র্যের দিকে ঈশ্বরের বিশেষ আনন্দ কোনোমতেই আমাকে সকলের সঙ্গে মিলে যেতে দেয় না। বিধাতা আমাকে সকলের করেছেন, আর