পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

هند আমাদের দেশের জ্ঞানীসম্প্রদায় কর্মকে বন্ধন বলে থাকেন। এই বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে নিক্রিয় হওয়াকেই তারা মুক্তি বলেন। এইজন্য কর্মক্ষেত্র প্রকৃতিকে তারা ধ্বংস করে নিশ্চিন্ত হতে চান। এইজন্য ব্রহ্মকেও তারা নিক্রিয় বলেন, এবং যা-কিছু জাগতিক ক্রিয়া একে মায়া বলে একেবারে অস্বীকার করেন। কিন্তু, উপনিষৎ বলেন— • যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে, যেন জাতানি জীবস্তি, যৎ প্রয়স্ত্যভিসংবিশস্তি, তদবিজিজ্ঞাসস্ব, তদব্ৰহ্ম। যার থেকে সমস্তই জন্মাচ্ছে, র্যার দ্বারা জীবন ধারণ করছে, যাতে প্রয়াণ ও প্রবেশ করছে, তাকে জানতে ইচ্ছা করে, তিনিই ব্ৰহ্ম । অতএব উপনিষদের ব্রহ্মবাদী বলেন, ব্রহ্মই সমস্ত ক্রিয়ার আধার। তা যদি হয় তবে কি তিনি এইসকল কর্মের দ্বারা বদ্ধ ? R এক দিকে কৰ্ম আপনিই হচ্ছে, আর-এক দিকে ব্রহ্ম স্বতন্ত্র হয়ে রয়েছেন, পরস্পরে কোনো যোগ নেই, এ কথাও যেমন আমরা বলতে পারি নে, তেমনি তার কর্ম মাকড়সার জালের মতো, শামুকের খোলার মতে, তার নিজেকে বদ্ধ করছে, এ কথাও বলা চলে না। এইজন্যই পরক্ষণে ব্রহ্মবাদী বলছেন— আনন্দাদ্ধোব খদ্বিমানি ভূতানি জায়স্তে, আনন্দেন জাতানি জীবস্তি, আনন্দং প্রয়স্ত্যভিসংবিশন্তি । ব্ৰহ্ম আনন্দস্বরূপ। সেই আনন্দ হতেই সমস্ত উৎপন্ন, জীবিত, সচেষ্ট এবং রূপান্তরিত হচ্ছে । কর্ম দুই রকর্মে হয়—এক অভাবের থেকে হয়, আর প্রাচুর্য থেকে হয়। অর্থাৎ, প্রয়োজন থেকে হয় বা আনন্দ থেকে হয়।