পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মত ›8ጫ বিবাদ করি তখন আমরা মত নিয়েই বিবাদ করি, সত্য নিয়ে নয়। সুতরাং, সত্যকে আচ্ছন্ন ক’রে, বিস্মৃত হয়ে, আমরা এক দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হই, আর-এক দিকে বিরোধ করে আমাদের দুঃখ ঘটে । আমাদের মধ্যে র্যারা নিজেকে দ্বৈতবাদী বলে ঘোষণা করেন তারা অদ্বৈতবাদকে বিভীষিকা বলে কল্পনা করেন। সেখানে তারা মতের সঙ্গে রাগারগি করে সত্যকে পর্যস্ত একঘরে করতে চান । যারা ‘অদ্বৈতম্ এই সত্যটিকে লাভ করেছেন তাদের সেই লাভটির মধ্যে প্রবেশ করে। তাদের কথায় যদি এমন কিছু থাকে যা তোমাকে আঘাত করে সে দিকে মন দেবার দরকার নেই। মায়াবাদ ! শুনলেই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠ কেন ? মিথ্যা কি নেই ? নিজের মধ্যে তার কি কোনো পরিচয় পাওয়া যায় নি ? সত্য কি আমাদের কাছে একেবারেই উন্মুক্ত ? আমরা কি এককে আর বলে জানি নে ? কাঠকে দগ্ধ করে যেমন আগুন জলে আমাদের অজ্ঞানকে অবিদ্যাকে মায়াকে দগ্ধ করেই কি আমাদের সত্যের জ্ঞান জলছে না ? আমাদের পক্ষে সেই মায়ার ইন্ধন জ্ঞানের জ্যোতি-লাভের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু এই মিথ্যা কি ব্রহ্মে আছে ? অনন্তের মধ্যে ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান যে একেবারে পর্যবসিত হয়ে আছে, অথচ আমার কাছে খণ্ডভাবে তা পরিবর্তনপরম্পরারূপে চলেছে, কোথাও তার পর্যাপ্তি নেই। এক জায়গায় ব্রহ্মের মধ্যে যদি কোনো পরিসমাপ্তি না থাকে, তবে আমরা এই-যে খণ্ড কালের ক্রিয়াকে অসমাপ্ত বলছি, একে অসমাপ্ত আখ্যা দেবারও কোনো তাৎপর্য থাকত না । এই খণ্ড কালের অসমাপ্তি এক দিকে অনন্তকে প্রকাশও করছে, এক দিকে আচ্ছন্নও করছে। যে দিকে আচ্ছন্ন করছে সে দিকে তাকে কী বলব ? তাকে মায়া বলব না কি ? মিথ্যা বলব না কি ? তবে "মিথ্যা’ শব্দটার স্থান কোথায় ? :