পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> 8b" শান্তিনিকেতন যিনি খণ্ড কালের সমস্ত খণ্ডত সমস্ত ক্রমিকতার আক্রমণ থেকে ক্ষণকালের জন্যও বিমুক্ত হয়ে অনন্ত পরিসমাপ্তির নির্বিকার নিরঞ্জন অতলম্পর্শ -মধ্যে নিজেকে নিঃশেষে নিমজ্জিত করে দিয়ে সেই স্তব্ধ শাস্ত গম্ভীর অদ্বৈতরসসমুদ্রে নিবিড়ানন্দের নিশ্চল স্থিতি লাভ করেছেন তাকে অামি ভক্তির সঙ্গে নমস্কার করি। আমি তার সঙ্গে কোনো কথা নিয়ে বাদপ্রতিবাদ করতে চাই নে । কেননা, আমি যে অনুভব করছি, মিথ্যার বোঝায় আমার জীবন ক্লান্ত । আমি যে দেখতে পাচ্ছি, যে পদার্থ টাকে ‘আমি বলে ঠিক করে বসে আছি তারই থালা ঘটি বাটি, তারই স্থাবর অস্থাবরের বোঝাকে সত্য পদার্থ বলে ভ্রম করে সমস্ত জীবন টেনে বেড়াচ্ছি—যতই দুঃখ পাই কোনোমতেই তাকেই ফেলতে পারি নে। অথচ, অন্তরাত্মার ভিতরে একটা বাণী আছে, ‘ও-সমস্ত মিথ্যা, ও-সমস্ত তোমাকে ত্যাগ করতেই হবে। মিথ্যার বস্তাকে সত্য বলে বহন করতে গেলে তুমি বঁাচবে না। তা হলে তোমার ‘মহতী বিনষ্টিঃ’ ।” নিজের অহংকারকে, নিজের দেহকে, টাকাকড়িকে, খ্যাতিপ্রতিপত্তিকে একান্ত সত্য বলে জেনে অস্থির হয়ে বেড়াচ্ছি এই যদি হয় তবে এই মিথ্যার সীমা কোথায় টানব ? বুদ্ধির মূলে যে ভ্রম থাকাতে আমি নিজেকে ভুল জানছি, সেই ভ্রমই কি সমস্ত জগৎ সম্বন্ধেও আমাদের ভোলাচ্ছে না ? সেই ভ্ৰমই কি আমার জগতের কেন্দ্রস্থলে আমার ‘আমি টিকে স্থাপন করে মরীচিকা রচনা করছে না ? তাই, ইচ্ছা কি করে না এই মাকড়সার জাল একেবারে ছিন্নভিন্ন পরিষ্কার করে দিয়ে সেই পরমাত্মার, সেই পরম-আমির, সেই একটিমাত্র আমির মাঝখানে অহংকারের সমস্ত আবরণ-বিবর্জিত হয়ে অবগাহন করি— ভারমুক্ত। হয়ে, বাসনামুক্ত হয়ে, মলিনতামুক্ত হয়ে, একেবারে স্ববৃহৎ পরিত্রাণ লাভ করি ।