পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংশয়

আকর্ষণ অনুভব করছে। সে মনে করছে, বুঝি তার এই ব্যাকুলতার কোনো পরিণাম নেই, কেননা সে তো সন্মুখে পরিণামকে দেখতে পাচ্ছে না, সে গর্ভস্থ শিশুর মতো নিজের আবরণকেই চারি দিকে অনুভব করছে।

 আসুক সেই অসহ্য বেদনা, সমস্ত প্রকৃতি কাঁদতে থাক্—সে কান্নার অবসান হবে। কিন্তু যে কান্না বেদনায় জেগে ওঠে নি, ফুটে ওঠে নি, জড়তার শত বেষ্টনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে— তার যে কোনো পরিণাম নেই। সে যে রক্তে মাংসে অস্থিমজ্জায় জড়িয়ে রয়েই গেল— তার ভার যে চব্বিশ ঘণ্টা নাড়ীতে নাড়ীতে বহন করে বেড়াতে হবে।

 যে দিন সংশয়ের ক্রন্দন আমাদের মধ্যে সত্য হয়ে ওঠে সে দিন আমরা সম্প্রদায়ের মত, দর্শনের তর্ক ও শাস্ত্রের বাক্য নিয়ে আরাম পাই নে; সে দিন আমরা এক মুহূর্তেই বুঝতে পারি প্রেম ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। সে দিন আমাদের প্রার্থনা এই হয় যে: প্রেম-আলোকে প্রকাশো জগতপতি হে!

 জ্ঞানের প্রকাশে আমাদের সংশয়ের সমস্ত অন্ধকার দূর হয় না। আমরা জেনেও জানি নে কখন? যখন আমাদের মধ্যে প্রেমের প্রকাশ হয় না। একবার ভেবে দেখো-না এই পৃথিবীতে কত শত সহস্র লোক আমাকে বেষ্টন করে আছে। তাদের যে জানি নে তা নয়, কিন্তু তারা আমার পক্ষে কিছুই নয়। সংসারে আমি এমন ভাবে চলি, যেন এই অগণ্য লোক তাদের সুখদুঃখ নিয়ে নেই। তবে কারা আছে? যারা আমার আত্মীয়স্বজন, আমার প্রিয়ব্যক্তি, তারাই অগণ্য জীবকে ছাড়িয়ে আছে। এই কয়েকটি লোকই আমার সংসার। কেননা এদেরই আমি প্রেমের আলোতে দেখেছি। এদেরই আমি কম-বেশি পরিমাণে আমার আত্মারই সমান করে দেখেছি। আমার আত্মা যে সত্য, আত্মপ্রেমে সেটা আমার কাছে একান্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে— সেই