পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\\2\o শাস্তিনিকেতন সেই দিনই ভারতবর্ষের উৎসবের দিন ছিল ; কেননা, সেইদিনই ভারতবর্ষ তার অমৃতযজ্ঞে সৰ্বমানবকে অমৃতের পুত্র বলে আহবান করেছিলেন— তার ঘৃণা ছিল না, অহংকার ছিল না। তিনি পরমাত্মার যোগে সকলের মধ্যেই প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন তার আমন্ত্রণধ্বনি জগতের কোথাও সংকুচিত হয় নি ; তার ব্রহ্মমন্ত্র বিশ্বসংগীতের সঙ্গে একতানে মিলিত হয়ে নিত্যকালের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল— সেই র্তার ছিল উৎসবের দিন । তার পরে বিধাতা জানেন কোথা হতে অপরাধ প্রবেশ করল । বিশ্বলোকের দ্বার চারি দিক হতে বন্ধ হতে লাগল, নির্বাপিত প্রদীপের মতো ভারতবর্ষ আপনার মধ্যে আপনি অবরুদ্ধ হল। প্রবল স্রোতস্বিনী যখন মরে আসতে থাকে তখন যেমন দেখতে দেখতে পদে পদে বালির চর জেগে উঠে তার সমুদ্রগামিনী ধারার গতিরোধ করে দেয়, তাকে বহুতর ছোটো ছোটো জলাশয়ে বিভক্ত করে— যে ধারা দূরদূরাস্তরের প্রাণদায়িনী ছিল, যা দেশদেশাস্তরের সম্পদ বহন করে নিয়ে যেত, ষে অশ্রান্ত ধারার কলধ্বনি জগৎসংগীতের তানপুরার মতো পর্বতশিখর থেকে মহাসমুদ্র পর্যন্ত নিরস্তর বাজতে থাকত— সেই বিশ্বকল্যাণী ধারাকে কেবল খণ্ড খণ্ড ভাবে এক-একটা ক্ষুদ্র গ্রামের সামগ্রী করে তোলে, সেই খণ্ডতাগুলি আপন পূর্বতন ঐক্যটিকে বিস্মৃত হয়ে বিশ্বনৃত্যে আর যোগ দেয় না, বিশ্বগীতসভায় আর স্থান পায় না— সেইরকম করেই নিখিল মানবের সঙ্গে ভারতবর্ষের সম্বন্ধের পুণ্যধারা সহস্ৰ সাম্প্রদায়িক বালুর চরে খণ্ডিত হয়ে গতিহীন হয়ে পড়ল। তার পরে, হায়, সেই বিশ্ববাণী কোথায় ? কোথায় সেই বিশ্বপ্রাণের তরঙ্গদোলা ? রুদ্ধ জল যেমন কেবলই ভয় পায় অল্পমাত্র অশুচিতায় পাছে তাকে কলুষিত করে, এইজন্যে সে যেমন স্নান পানের নিষেধের দ্বারা নিজের চারি দিকে বেড়া তুলে দেয়, তেমনি.মাজ বন্ধ ভারতবর্ষ কেবলই কলুষের আশঙ্কায়