পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३३ ● বিশ্বাস সাধনা-আরম্ভে প্রথমেই সকলের চেয়ে একটি বড়ো বাধা আছে, সেইটি কাটিয়ে উঠতে পারলে অনেকটা কাজ এগিয়ে যায়। সেটি হচ্ছে প্রত্যয়ের বাধা। অজ্ঞাতসমূদ্র পার হয়ে একটি-কোনো তীরে গিয়ে ঠেকবই এই নিশ্চিত প্রত্যয়ই হচ্ছে কলম্বসের সিদ্ধির প্রথম এবং মহৎ সম্বল। আরো অনেকেই আটলাণ্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় পৌছোতে পারত, কিন্তু তাদের দীনচিত্তে ভরসা ছিল না, তাদের বিশ্বাস উজ্জ্বল ছিল না যে কুল আছে। এইখানেই কলম্বসের সঙ্গে তাদের পার্থক্য । আমরাও অধিকাংশ লোক সাধনাসমুদ্রে ষে পাড়ি জমাই নে তার প্রধান কারণ, আমাদের অত্যন্ত নিশ্চিত প্রত্যয় জন্মে নি যে সে সমুদ্রের পার আছে। শাস্ত্র পড়েছি, লোকের কথাও শুনেছি, মুখে বলি ‘হঁই’ ‘বটে বটে, কিন্তু মানবজীবনের যে একটা চরম লক্ষ্য আছে সে প্রত্যয় নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয় নি। এইজন্য ধর্মসাধনটা নিতান্তই বাহ ব্যাপার, নিতান্তই দশ জনের অনুকরণ মাত্র হয়ে পড়ে। আমাদের সমস্ত আন্তরিক চেষ্টা তাতে উদবোধিত হয় নি। এই বিশ্বাসের জড়তা-বশতই লোককে ধর্মসাধনে প্রবৃত্ত করতে গেলে আমরা তাকে প্রতারণা করতে চেষ্টা করি ; আমরা বলি, এতে পুণ্য হবে । পুণ্য জিনিসটা কী ? না, পুণ্য হচ্ছে একটি হ্যানড্রনোট যাতে ভগবান আমাদের কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন, কোনো-এক-রকম টাকায় তিনি কোনো-এক সময়ে সেটা পরিশোধ করে দেবেন। এইরকম একটা স্বম্পষ্ট পুরস্কারের লোভ আমাদের স্থূল প্রত্যয়ের অমুকুল। কিন্তু, সাধনার লক্ষ্যকে এইরকম বহির্বিষয় করে তুললে তার পথও ঠিক অস্তরের পথ হয় না, তার লাভও অন্তরের লাভ হয় না। সে