পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বাস २३ ॐ একটা পারলৌকিক বৈষয়িকতার স্বষ্টি করে। সেই বৈষয়িকতা অন্তান্ত বৈষয়িকতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । কিন্তু, সাধনার লক্ষ্য হচ্ছে মানবজীবনের চরম লক্ষ্য । সে লক্ষ্য কখনোই বাহিরের কোনো স্থান নয়, যেমন স্বর্গ ; বাহিরের কোনো পদ নয়, যেমন ইন্দ্রপদ ; এমন কিছুই নয় যাকে দূরে গিয়ে সন্ধান করে বের করতে হবে, যার জন্যে পাণ্ড পুরোহিতের শরণাপন্ন হতে হবে। এ কিছুতে হতেই পারে না । মানবজীবনের চরম লক্ষ্য কী এই প্রশ্নটি নিজেকে জিজ্ঞাসা করে নিজের কাছ থেকে এর একটি স্পষ্ট উত্তর বের করে নিতে হবে। কারও কোনো শোনা কথায় এখানে কাজ চলবে না— কেননা, এটি কোনো ছোটো কথা নয়, এটি একেবারে শেষ কথা । এটিকে যদি নিজের অন্তরাত্মার মধ্যে না পাই তবে বাইরে খুজে পাব না। এই বিশাল বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের মাঝখানে আমি এসে দাড়িয়েছি এটি একটি মহাশ্চর্য ব্যাপার। এর চেয়ে বড়ো ব্যাপার আর কিছু নেই। আশ্চর্য এই আমি এসেছি— আশ্চর্য এই চারি দিক । এই-ষে আমি এসে দাড়িয়েছি, কেবল খেয়ে ঘুমিয়ে গল্প করে কি এই আশ্চর্যটাকে ব্যাখ্যা করা যায় ? প্রবৃত্তির চরিতার্থতাই কি একে প্রতি মুহূর্তে অপমানিত করবে এবং শেষ মুহূর্তে মৃত্যু এসে একে ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়ে চলে যাবে ? এই ভূত্বভুব:স্বলোকের মাঝখানটিতে দাড়িয়ে নিজের অন্তরাকাশের চৈতন্যলোকের মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে : কেন ? এসমস্ত কী জন্তে ? এ প্রশ্নের উত্তর জল স্থল আকাশের কোথাও নেই ; এ প্রশ্নের উত্তর নিজের অন্তরের মধ্যে নিহিত হয়ে রয়েছে। এর একমাত্র উত্তর হচ্ছে আত্মাকে পেতে হবে। এ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো কথা নেই। আত্মাকেই সত্য করে পূর্ণ করে জানতে হবে।