পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११३ শাস্তিনিকেতন আত্মাকে যেখানে জানলে সত্য জানা হয় সেখানে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি নে। এইজন্তে আত্মাকে জানা বলে যে একটা পদার্থ আছে এই কথাটা আমাদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই এসে পৌছোয় না। আত্মাকে আমরা সংসারের মধ্যেই জানতে চাচ্ছি। তাকে কেবলই ঘর-ছুয়োর ঘটিবাটির মধ্যেই জানছি। তার বেশি তাকে আমরা জানিই নে— এইজন্যে তাকে পাচ্ছি আর হারাচ্ছি, কেবল কাদছি আর ভয় পাচ্ছি। মনে করছি, এটা না পেলেই আমি মলুম, আর ওটা পেলেই একেবারে ধন্য হয়ে গেলুম। এটাকে এবং ওটাকেই প্রধান করে জানছি, আত্মাকে তার কাছে খর্ব করে সেই প্রকাও দৈন্যের বোঝণকেই ঐশ্বর্ষের গর্বে বহন করছি। আত্মাকে সত্য করে জানলেই আত্মার সমস্ত ঐশ্বৰ্য-লাভ হয়। মৃত্যুর সামগ্রীর মধ্যে অহরহ তাকে জড়িত করে তাকে শোকের বাম্পে, ভয়ের অন্ধকারে, লুপ্তপ্রায় করে দেখার দুদিন কেটে যায়। পরমাত্মার মধ্যেই তার পরিপূর্ণ সত্য, পরিপূর্ণ স্বরূপ, প্রকাশ পায়— সংসারের মধ্যে নয়, বিষয়ের মধ্যে নয়, তার নিজের অহংকারের মধ্যে নয় । আত্মা সত্যের পরিপূর্ণতার মধ্যে নিজেকে জানবে, সেই পরম উপলব্ধি দ্বারা সে বিনাশকে একেবারে অতিক্রম করবে। সে জ্ঞানজ্যোতির নির্মলতার মধ্যেই নিজেকে জানবে। কাম ক্রোধ লোভ যেসমস্ত বিকারের অন্ধকার রচনা করে তার থেকে আত্মা বিশুদ্ধ শুভ্র নিৰ্বমুক্ত পবিত্রতার মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে এবং সর্বপ্রকার আসক্তির মৃত্যুবন্ধন থেকে প্রেমের অমৃতলোকে মুক্তিলাভ করে সে নিজেকে অমর ব’লেই জানবে। সে জানবে কার প্রকাশের মধ্যে তার প্রকাশ সত্য— সেই “আবিঃ, সেই প্রকাশস্বরূপকেই, সে আত্মার পরম প্রকাশ বলে নিজের সমস্ত দৈন্ত দূর করে দেবে এবং অস্তরে বাহিরে সর্বত্রই একটি প্রসন্নতা লাভ করে সে স্পষ্ট জানতে পারবে সে