পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
শাস্তিনিকেতন

আমার তন্দ্রালস চিত্তকে আঘাত করল। তখন তপ্ত শয্যার তাপ অসহ্য বোধ হল, তখন নিজের নিশ্বাস-কলুষিত বদ্ধ ঘরের বাতাস আমার নিশ্বাস রোধ করতে লাগল; তখন তো আর থাকতে পারা গেল না; তখন উন্মুক্ত নিখিলের স্নিগ্ধতা নির্মলতা পবিত্রতা—সমস্ত সৌন্দর্য সৌগন্ধ্য সংগীতের আভাস আমাকে আহ্বান করে বাইরে নিয়ে এল। তুমি তেমনি করে আমার আবরণের কোনো দুই-একটা ছিদ্রের ভিতর দিয়ে তোমার আলোকের দূতকে, তোমার মুক্তির বার্তাবহকে প্রেরণ করো— তা হলেই নিজের আবদ্ধতার তাপ এবং কলুষ এবং অন্ধকার আমাকে আর সুস্থির হতে দেবে না; আরামের শয্যা আমাকে দগ্ধ করতে থাকবে, তখন বলতেই হবে: যেনাহং নামৃতঃ স্যাম্ কিমহং তেন কুর্যাম্।

 ২৫ অগ্রহায়ণ

দুঃখ

আমাদের উপাসনার মন্ত্রে আছে: নমঃ সম্ভবায় চ ময়োভবায় চ! সুখকরকে নমস্কার করি, কল্যাণকরকে নমস্কার। কিন্তু আমরা সুখকরকেই নমস্কার করি, কল্যাণকরকে সব সময়ে নমস্কার করতে পারি নে। কল্যাণকর যে শুধু সুখকর নন, তিনি যে দুঃখকর। আমরা সুখকেই তাঁর দান বলে জানি, আর দুঃখকে কোনো দুর্দৈবকৃত বিড়ম্বনা বলেই জ্ঞান করি।

 এইজন্যে দুঃখভীরু বেদনাকাতর আমরা দুঃখ থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্যে নানা প্রকার আবরণ রচনা করি, আমরা কেবলই লুকিয়ে থাকতে চাই। তাতে কী হয়? তাতে সত্যের পূর্ণ সংস্পর্শ থেকে আমরা বঞ্চিত হই।

 ধনী বিলাসী সমস্ত আয়াস থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে কেবল আরামের