পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३8२ & শান্তিনিকেতন নিজের পাতারই সঙ্গে ফলের ষে বর্ণমাদৃত ছিল সেটা ক্রমশ ঘুচে আসতে থাকে, চারি দিকে আকাশের আলোর যে রঙ সেই রঙের সঙ্গেই তার মিল হয়ে আসে। যে গাছে তার জন্ম সেই গাছের সঙ্গে নিজের রঙের পার্থক্য সে আর কিছুতেই সম্বরণ করতে পারে না— চারি দিকের নিবিড় শু্যামলতার আচ্ছাদন থেকে সে বাহিরের আকাশে প্রকাশ পেয়ে উঠতে থাকে। তার পরে তার বাহিরটি ক্রমশই কোমল হয়ে আসে। আগে বড়ো শক্ত অঁাট ছিল, কিন্তু এখন আর সে কঠোরতা নেই। দীপ্তিময় স্বগন্ধময় কোমলতা। পূর্বে তার যে রস ছিল সে রসে তীব্র আমতা ছিল, এখন সমস্ত মাধুর্বে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, এখন তার বাইরের পদার্থ সমস্ত বাইরেরই হয়, সকলেরই ভোগের হয়, সকলকে আহবান করে, কাউকে ঠেকাতে চায় না। সকলের কাছে সে কোমল সুন্দর হয়ে ওঠে। গভীরতর সার্থকতার অভাবেই মানুষের তীব্রত কঠিনতা এমন উগ্রভাবে প্রকাশ পায় ; সেই আনন্দের দৈন্যেই তার দৈন্য, সেইজন্যেই সে বাহিরকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। তার পরে তার ভিতরকার যেটি আসল জিনিস, তার আঁটি, যেটিকে বাইরে দেখাই যায় না, তার সঙ্গে তার বাহিরের অংশের একটা বিশ্লিষ্টতা ঘটতে থাকে। সেটা যে তার নিত্যপদার্থ নয় তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে আসে। তার শস্ত-অংশের সঙ্গে তার ছালটা পৃথক হতে থাকে, ছাল অনায়াসে শাস থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া যায়, আবার তার শাসও আঁটি থেকে সম্পূর্ণ ছাড়িয়ে ফেলা সহজ হয় । তার বোটা এতদিন গাছকে অঁাকড়ে ছিল, তাও আলগা হয়ে আসে। গাছের সঙ্গে নিজেকে সে আর অত্যন্ত এক, করে রাখে না, নিজের বাহিরের আচ্ছাদনের সঙ্গেও নিজের ভিতরের অঁাটিকে সে নিতান্ত একাকার করে থাকে না।