পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२6७ শান্তিনিকেতন আমাদের তো সে ক্ষমতা নেই। দান করতে গেলে আমাদের যে উপকরণ চাই। সেই উপকরণ তো কেবলমাত্র আনন্দের দ্বারা আমরা স্বাক্ট করতে পারি নে । তখন আমার অহং উপকরণ সংগ্রহ করে আনে। সে যা-কিছু সংগ্রহ করে তাকে সে ‘আমার’ বলে। কারণ, তাকে নানা বাধা কাটিয়ে সংগ্রহ করতে হয়, এই বাধা কাটাতে তাকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয় । সেই শক্তির দ্বারা এই উপকরণে তার অধিকার জন্মায়। শক্তির দ্বারা অহং শুধু যে উপকরণ সংগ্রহ করে তা নয় ; সে উপকরণকে বিশেষভাবে সাজায়, তাকে একটি বিশেষত্ব দান ক’রে গ’ড়ে তোলে। এই বিশেষত্ব-দানের দ্বারা সে যা-কিছু গড়ে তোলে তাকে সে নিজের জিনিস বলেই গৌরব বোধ করে। এই গৌরবটুকু ঈশ্বর তাকে ভোগ করতে দিয়েছেন। এই গৌরবটুকু যদি সে বোধ না করবে তবে সে দান করবে কী করে ? যদি কিছুই তার ‘আমার’ না থাকে তবে সে দেবে কী ? অতএব, দানের সামগ্ৰীটিকে প্রথমে একবার ‘আমার করে নেবার জন্যে এই অহং-এর দরকার। বিশ্বজগতের স্বষ্টিকর্তা ঈশ্বর বলে রেখেছেন জগতের মধ্যে যেটুকুকেই আমার আত্মা এই অহং'এর গণ্ডি দিয়ে ঘিরে নিতে পারবে তাকেই তিনি ‘আমার’ বলতে দেবেন– কারণ, তার প্রতি যদি মমত্ত্বের অধিকার না জন্মে তবে আত্মা যে একেবারেই দরিত্র হয়ে থাকবে। সে দেবে কী ? বিশ্বভুবনের কিছুকেই তার ‘আমার’ বলবার নেই। , ঈশ্বর ওইখানে নিজের অধিকারটি হারাতে রাজি হয়েছেন। বাপ যেমন ছোটো শিশুর সঙ্গে কুস্তির খেল খেলতে খেলতে ইচ্ছাপূর্বক হার মেনে পড়ে যান, নইলে কুস্তির খেলাই হয় না, নইলে গ্রেহের আনন্দ জমে না, নইলে ছেলের মুখে হাসি ফোটে না, সে হতাশ হয়ে পড়ে—