পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

मनौ e कूल २७s হলেই নদীর চিরন্তন ধারা বাধা পায়। ক্রমে ক্রমে নদী হয়ে পড়ে গৌণ, চরই হয়ে পড়ে মুখ্য। শেষকালে ফন্তুর মতো নদীটা একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে । আত্মা সেই চিরস্রোত নদীর মতো। অনাদি তার উৎপত্তিশিখর, অনন্ত তার সঞ্চারক্ষেত্র। আনন্দই তাকে গতিবেগ দিয়েছে, সেই গতির বিরাম নেই। I এই আত্মা যে দেশ দিয়ে য়ে কাল দিয়ে চলেছে তার গতিবেগে সেই দেশ ও সেই কালের নানা উপকরণ সঞ্চিত হয়ে তার একটি সংস্কাররূপ তৈরি হতে থাকে— এই জিনিসটি কেবলই ভাঙছে, গড়ছে, কেবলই আকারপরিবর্তন করছে । কিন্তু, স্বষ্টি কোনো কোনো অবস্থায় স্বষ্টিকর্তাকে ছাপিয়ে উঠতে পারে। আত্মাকেও তার দেশকালজাত অহং প্রবল হয়ে উঠে অবরুদ্ধ করতে পারে। এমন হতে পারে অহংটাকেই তার স্তৃপাকার উপকরণসমেত দেখা যায়, আত্মাকে আর দেখা যায় না। অহং চারি দিকেই বড়ো হয়ে উঠে আত্মাকে বলতে থাকে, ‘তুমি চলতে পাবে না, তুমি এইখানেই থেকে যাও ; তুমি এই ধনদৌলতেই থাকে, এই ঘরবাড়িতেই থাকে, এই খ্যাতিপ্রতিপত্তিতেই থাকে৷ ” যদি আত্মা আটকা পড়ে তবে তার স্বরূপ ক্লিষ্ট হয়, তার স্বভাব নষ্ট হয়। সে তার গতি হারায়। অনস্তের মুখে সে আর চলে না ; সে মজে যায়, সে মরতে থাকে। আত্মা দেশকলপাত্রের মধ্যে দিয়ে নানা উপকরণে এই-ষে নিজের উপকূল রচনা করতে থাকে তার প্রধান সার্থকতা এই যে, এই কুলের দ্বারাই তার গতি সাহায্য প্রাপ্ত হয়। এই কুল না থাকলে সে ব্যাপ্ত হয়ে, বিক্ষিপ্ত হয়ে, অচল হয়ে থাকত। অহং লোকে লোকান্তরে আত্মার গতিবেগকে বাড়িয়ে তার গতিপথকে এগিয়ে নিয়ে চলে।