পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্যাগ
১৯

কিন্তু প্রতিদিনই যদি ইচ্ছাকে এই ত্যাগের অভিমুখে প্রস্তুত না করি তবে মৃত্যু ও ক্ষতি যখন তার বড়ো বড়ো দাবি নিয়ে আমাদের সম্মুখে এসে দাঁড়াবে তখন তাকে কোনোমতে ফাকি দিতে ইচ্ছা হবে, অথচ সেখানে একেবারেই ফাকি চলবে না— সে বড়ো দুঃখের দিন উপস্থিত হবে।

 এই ত্যাগের দ্বারা আমরা দারিদ্র্য ও রিক্ততা লাভ করি এমন কথা যেন আমাদের মনে না হয়। পূর্ণতররূপে লাভ করবার জন্যেই আমাদের ত্যাগ।

 আমরা যেটা থেকে বেরিয়ে না আসব সেটাকে আমরা পাব না। গর্ভের মধ্যে আবৃত শিশু তার মাকে পায় না— সে যখন নাড়ীর বন্ধন কাটিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, স্বাধীন হয়, তখনই সে তার মাকে পূর্ণতরভাবে পায়।

 এই জগতের গর্তাবরণের মধ্যে থেকে আমাদের সেইরকম করে মুক্ত হতে হবে— তা হলেই যথার্থভাবে আমরা জগৎকে পাব, কারণ, স্বাধীনভাবে পাব। আমরা জগতের মধ্যে বদ্ধ হয়ে ভ্রণের মতো জগৎকে দেখতেই পাই নে; যিনি মুক্ত হয়েছেন তিনিই জগৎকে জানেন, জগৎকে পান।  এইজন্যই বলছি, যে লোক সংসারের ভিতরে জড়িয়ে রয়েছে সেই যে আসল সংসারী তা নয়; যে সংসার থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সংসারী, কারণ, সে তখন সংসারের থাকে না, সংসার তারই হয়। সেই সত্য করে বলতে পারে ‘আমার সংসার’।

 ঘোড়া গাড়ির সঙ্গে লাগামে বদ্ধ হয়ে গাড়ি চালায়, কিন্তু ঘোড়া কি বলতে পারে ‘গাড়িটা আমার’? বস্তুত, গাড়ির চাকার সঙ্গে তার বেশি তফাত কী? যে সারথি মুক্ত থেকে গাড়ি চালায় গাড়ির উপরে কর্তৃত্ব তারই।