পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বভাবলাভ ર૪૧ কখনোই যথার্থ মঙ্গলকে পায় না, স্বতরাং ঈশ্বরকে লাভ তার পক্ষে অসাধ্য। কোনো মানুষের প্রতি অনুরাগ যখন স্বভাব থেকে আমাদের বিচ্যুত করে তখনই তা কাম হয়ে ওঠে ; সেই কাম আমাদের ঈশ্বরলাভের বাধা । - এইজন্য অসামঞ্জস্য থেকে, বিকৃতি থেকে, মামুষের চিত্তকে স্বভাবে উদ্ধার করাই হচ্ছে ধর্মনীতির একান্ত চেষ্টা । উপনিষদে ঈশ্বরকে সর্বব্যাপী বলবার সময় যখন তাকে অপাপবিদ্ধ বলা হয়েছে, তখন তার তাৎপর্য এই । তিনি স্বভাবে অবাধে পরিব্যাপ্ত। পাপ তাকে কোনো-একটা বিশেষ সংকীর্ণতায় আকৃষ্ট আবদ্ধ করে অন্যত্র থেকে পরিহরণ করে নেয় না— এই গুণেই তিনি সর্বব্যাপী । আমাদের মধ্যে পাপ সমগ্রের ক্ষতি ক’রে কোনো-একটাকেই স্ফীত করতে থাকে। তাতে ক’রে কেবল যে নিজের স্বভাবের মধ্যে নিজের সামঞ্জস্য থাকে না তা নয় ; চারি দিকের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, আমাদের সামঞ্জস্য নষ্ট হয়ে যায়। ধর্মনীতিতে আমরা এই-যে স্বভাবলাভের সাধনায় প্রবৃত্ত আছি, সমাজ এবং নীতিশাস্ত্র এজন্যে দিনরাত তাড়ন করছে। এইখানেই কি এর শেষ ? ঈশ্বরসাধনাতেও কি এই নিয়মের স্থান নেই ? সেখানেও কি আমরা কোনো-একটি ভাবকে, কোনো-একটি রসকে, সংকীর্ণ অবলম্বনের স্বারা অতিমাত্র আন্দোলিত করে তোলাকেই মানুষের একটি চরম লাভ বলে গণ্য করব ? * দুর্বলের মনে একটা উত্তেজনা জাগিয়ে তার হৃদয়কে প্রলুব্ধ করবার জন্যে এইসকল উপায়ের প্রয়োজন, এমন কথা অনেকে বলেন । যে লোক মদ খেয়ে আনন্দ পায় তার সম্বন্ধে কি আমরা ওইরূপ তর্ক করতে পারি? আমরা কি বলতে পারি মদেই যখন ও বিশেষ আনন্দ পায় তখন ওইটেই ওর পক্ষে শ্রেয় ?