পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\5e 3. আত্মসমপণ তাই বলছিলুম, ব্রহ্মকে পাওয়ার কথাটা ঠিক বলা চলে না। কেননা, তিনি তো আপনাকে দিয়েই বসে আছেন, তার তো কোনোখানে কমতি নেই— এ কথা তো বলা চলে না যে, এই জায়গায় তার অভাক আছে, অতএব আর-এক জায়গায় তাকে খুজে বেড়াতে হবে। অতএব, ব্রহ্মকে পেতে হবে এ কথাটা বলা ঠিক চলে না— ‘আপনাকে দিতে হবে’ বলতে হবে । ওইখানেই অভাব আছে, সেইজন্যেই মিলন হচ্ছে না। তিনি আপনাকে দিয়েছেন, আমরা আপনাকে দিই নি। আমরা নানাপ্রকার স্বার্থের অহংকারের ক্ষুদ্রতার বেড়। দিয়ে নিজেকে অত্যন্ত স্বতন্ত্র, এমন-কি বিরুদ্ধ করে রেখেছি । এইজন্যই বুদ্ধদেব এই স্বাতন্ত্র্যের অতি কঠিন বেষ্টন নানা চেষ্টায় ক্রমে ক্রমে ক্ষয় করে ফেলবার উপদেশ করেছেন। এর চেয়ে বড়ো সত্তা, বড়ো আনন্দ যদি কিছুই না থাকে, তা হলে এই ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য নিরস্তর অভ্যাসে নষ্ট করে ফেলবার কোনো মানে নেই। কারণ, কিছুই যদি না থাকে তা হলে তো আমাদের এই অহং, এই ব্যক্তিগত বিশেষত্বই, একেবারে পরম লাভ— তা হলে একে অঁাকড়ে না রেখে এত করে নষ্ট করব কেন ? কিন্তু আসল কথা এই যে, যিনি পরিপূর্ণরূপে নিজেকে দান করেছেন আমরাও তার কাছে পরিপূর্ণরূপে নিজেকে দান না করলে তাকে প্রতিগ্রহ করাই হবে না। আমাদের দিকেই বাকি আছে । তার উপাসনা তাকে লাভ করবার উপাসনা নয়— আপনাকে দান করবার উপাসনা। দিনে দিনে ভক্তি-দ্বারা, ক্ষমা-দ্বারা, সন্তোষের দ্বার, সেবার দ্বারা, তার মধ্যে নিজেকে মঙ্গলে ও প্রেমে বাধাহীনৰূপে ব্যাপ্ত করে দেওয়াই তার উপাসনা।