পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধীর যুক্তাঙ্ক \OS 3. আসল জিনিসটিকে পেলেই সমস্তই সহজ হয়ে যায়— জিনিসের সমস্ত ভার এক মুহূর্তে লাঘব হয়ে যায়। সাতারটি যেমনি জেনেছি আমনি অগাধ জলে বিহারও আমার পক্ষে যেন স্বাভাবিক হয়ে যায় ; তখন অতল জলে ডুব দিলেও বিনাশে তলিয়ে যাই নে, আপনি ভেসে উঠি । এই সাতারটি না জানলেই জল প্রতি পদে আমাকে বাধা দেয়, আমাকে মারতে চায়। যে জলে সঞ্চরণ সাতার জানলে আমার পক্ষে লীলা, আমার পক্ষে আনন্দ, সাতার না জানলে সেই জলে সঞ্চরণই আমার পক্ষে দুঃখ, আমার পক্ষে মৃত্যু। তখন অল্প জলেও হাত পা ছুড়ে ইসিফাস করে ক্লাস্ত হয়ে পড়ি । আমাদের আসল জানবার বিষয়কে, পাবার বিষয়কে, যেমনি লাভ করি, অমনি এই সংসারের বিচিত্ৰতা আর আমাদের বাধতে পারে না, ঠেকাতে পারে না, মারতে পারে না। তখন, পূর্বে যা বিভীষিকা ছিল এখন সেইটেই সহজ হয়ে যায়, সংসারে তখন আমরা মুক্তভাবে আনন্দ পাই । সংসার তখন আমাদের অধিকার করে না, আমরাই সংসারকে অধিকার করি। তখন, পূর্বে পদে পদে আমাদের যে আক্ষেপ বিক্ষেপ, যে শক্তির অপব্যয় ছিল সেটা কেটে যায়। সেইজন্যই উপনিষৎ বলেছেন : তে সর্বগং সর্বতঃ প্রাপ্য ধীর। যুক্তাত্মানঃ সর্বমেবাবিশন্তি। সেই সর্বব্যাপীকে যারা সকল দিক থেকেই পেয়েছেন তারা ধীর হয়ে, যুক্তাত্মা হয়ে সর্বত্রই প্রবেশ করেন। প্রথমে তারা ধৈর্য লাভ করেন। আর তার নানা বিষয় ও নানা ব্যাপারের মধ্যে কেবলই বিক্ষিপ্ত হয়ে উদভ্ৰাস্ত হয়ে বেড়ান না, তারা অপ্ৰগলভ অপ্ৰমত্ত ধীর হন। তারা যুক্তাত্মা হন, সেই পরম একের সঙ্গে ৰোগযুক্ত হন। নিজেকে কোনো অহংকার কোনো আসক্তি -ৰাব স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন করেন না ; একের সঙ্গে মিলিত হয়ে জানন্দে বিশ্বের সমস্ত বহুর মধ্যে প্রবেশ করেন, সমস্ত বহু তখন তাদের পর ছেড়ে দেয়।