পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\998 শাস্তিনিকেতন ধর্মের দিকে নিয়ে যায় না, অধর্ম থেকে নিরস্ত করে না ; তাই হে প্ৰভু, স্থির করেছি তোমাকেই আমি হৃদয়ে রাখব এবং তুমি আমাকে যে দিকে চালাবে সেই দিকে চলব। স্বার্থ আমাকে যে দিকে চালাতে চায় সে দিকে চলব না, অহংকার আমাকে যে পথ থেকে নিবৃত্ত করতে চায় আমি সে পথ থেকে নিবৃত্ত হব না। অতএব, তাকে হৃদয়ের মধ্যে স্থাপিত করে তার হাতে নিজের ভার সমর্পণ করা, প্রত্যহ আমাদের ইচ্ছাশক্তির এই একটিমাত্র সাধনা হোক । এইটি করতে গেলে গোড়াতেই অহংকারকে তার চূড়ার উপর থেকে একেবারে নামিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর সকলের সঙ্গে সমান হও, সকলের পিছনে এসে দাড়াও, সকলের নীচে গিয়ে বসে, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তোমার দীনতা ঈশ্বরের প্রসাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক, তোমার নম্রতা স্বমধুর অমৃতফলভারে সার্থক হোক। সর্বদা লড়াই করে নিজের জন্যে ওই একটুকখানি স্বতন্ত্র জায়গা বঁচিয়ে রাখবার কী দরকার, তার কী মূল্য ? জগতের সকলের সমান হয়ে বসতে লজ্জা কোরো না— সেইখানেই তিনি বসে আছেন । যেখানে সকলের চেয়ে উচু হয়ে থাকবার জন্তে তুমি একলা বসে আছ সেখানে তার স্থান অতি সংকীর্ণ। যতদিন তার কাছে আত্মসমপণ না করবে ততদিন তোমার হারজিত, তোমার স্বখদুঃখ, ঢেউয়ের মতো কেবলই টলাবে, কেবলই ঘোরাবে। প্রত্যেকটার পুরো আঘাত তোমাকে নিতে হবে। যখন তোমার পালে তার হাওয়া লাগবে তখন তরঙ্গ সমানই থাকবে, কিন্তু তুমি হু হু করে চলে যাবে। তখন সেই তরঙ্গ আনন্দের তরঙ্গ। তখন প্রত্যেক তরঙ্গটি কেবল তোমাকে নমস্কার করতে থাকবে এবং এই কথাটিরই প্রমাণ দেবে যে, তুমি তাকে আত্মসমর্পণ করেছ।