পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
শান্তিনিকেতন

আমরা কথার অধীন, প্রথার অধীন, অসংখ্য প্রবৃত্তির অধীন—এত বড়ো জন্ম-অধীন দাসানুদাসকে এ কথা বলাই মিথ্যা যে, ‘মুক্তিতে তোমার সার্থকতা আছে’। যে ব্যক্তি স্বভাবত এবং স্বেচ্ছাক্রমেই বন্ধ তাকে মুক্তির প্রলোভন দেখানো মিথ্যা।

 বস্তুত মুক্তি তার কাছে শূন্যতা, নির্বাণ, মরুভূমি। যে মুক্তির মধ্যে তার ঘর-দুয়ার ঘটিবাটি টাকাকড়ি কিছুই নেই, যা-কিছুকে সে একমাত্র আশ্রয় বলে জানত তার সমস্তই বিলুপ্ত—সে মুক্তি তার কাছে বিভীষিকা, বিনাশ।

 আমরা যে ত্যাগ করব তা যদি শূন্যতার মধ্যেই ত্যাগ হয় তবে সে তো একেবারেই লোকসান। একটি কানাকড়িকেও সেই রকম শূন্যের মধ্যে বিসর্জন দেওয়া আমাদের পক্ষে একেবারে অসহ্য।

 কিন্তু ত্যাগ তো শূন্যের মধ্যে নয়। যদ্ যদ্ কর্ম প্রকুর্বীত তদব্রহ্মণি সমর্পয়েৎ। যা কিছু করবে সমস্তই ব্রহ্মে সমর্পণ করবে। তোমার সংসারকে, তোমার প্রিয়জনকে, তোমার সমস্ত কিছুকেই তাঁকে নিবেদন করে দাও— এই-যে ত্যাগ এ যে পরিপূর্ণতার মধ্যে বিসর্জন।

 পূর্ণের মধ্যে যাকে ত্যাগ করি তাকেই সত্যরূপে পূর্ণরূপে লাভ করি এ কথা পূর্বেই বলেছি। কিন্তু এতেও কথা শেষ হয় না। কেবলমাত্র লাভের কথায় কোনো কথার সমাপ্তি হতে পারে না— লাভ করে কী হবে এ প্রশ্ন থেকে যায়। স্বাধীন হয়েই বা কী হবে, পূর্ণতা লাভ করেই বা কী হবে?

 যখন কোনো ছেলেকে পয়সা দিই সে জিজ্ঞাসা করতে পারে পয়সা নিয়ে কী হবে? উত্তর যদি দিই বাজারে যাবে, তা হলেও প্রশ্ন এই যে বাজায়ে গিয়ে কী হবে? পুতুল কিনবে। পুতুল কিনে কী হবে? খেলা করে কী হবে? তখন একটি উত্তরে সব প্রশ্নের খেলা শেষ হয়ে যায়—খুশি হবে। খুশি হয়ে কী হবে এ প্রশ্ন কেউ কখনও