७२० * শান্তিনিকেতন মনের মতো একটি-কিছু স্থির করে নিতে হবে। মন্ত্র জিনিসটি একটি বাধবার উপায় । মন্ত্রকে অবলম্বন করে আমরা মননের বিষয়কে মনের সঙ্গে বেঁধে রাখি। এ যেন বীণার কানের মতো । তারকে এটে রাখে, খুলে পড়তে দেয় না। বিবাহের সময় স্ত্রীপুরুষের কাপড়ে কাপড়ে গ্রন্থি বেঁধে দেয়, সেই সঙ্গে মন্ত্র পড়ে দেয়, সেই মন্ত্ৰ মনের মধ্যেও গ্রন্থি বাধতে থাকে। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের যে গ্রন্থিবন্ধনের প্রয়োজন আছে মন্ত্র তার সহায়তা করে। এই মন্ত্রকে অবলম্বন করে আমরা তার সঙ্গে একটাকোনো বিশেষ সম্বন্ধকে পাকা করে নেব। সেইরূপ একটি মন্ত্র হচ্ছে : পিতা নোহসি । এই স্বরে জীবনটাকে বাধলে সমস্ত চিন্তায় ও কর্মে একটি বিশেষ রাগিণী জেগে উঠবে। আমি তার পুত্র এইটেই মূর্তি ধরে আমার সমস্তের মধ্যেই এই কথাটাই প্রকাশ করবে যে, আমি তার পুত্র। আজ আমি কিছুই প্রকাশ করছি নে। আহার করছি, কাজ করছি, বিশ্রাম করছি, এই পর্যন্তই। কিন্তু, অনন্ত কালে অনন্ত জগতে আমার পিতা যে আছেন তার কোনো লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না। অনন্তের সঙ্গে আজও আমার কোনো গ্রস্থি কোথাও বাধা হয় নি । ওই মন্ত্রটিকে দিয়ে জীবনের তার আজ বাধা যাক । আহারে বিহারে শয়নে স্বপনে ওই মন্ত্রটি বারম্বার আমার মনের মধ্যে বাজতে থাক : পিতা নোহসি। জগতে আমার পিতা আছেন এই কথাটি সকলেই জাহক, কারও কাছে গোপন না থাক। " ভগবান বিশু ওই স্বরটিকে পৃথিবীতে বাজিয়ে গিয়েছেন। এমনি ঠিক করে তার জীবনের তার বাধা ছিল যে মরণাস্তিক যন্ত্রণার দুঃসহ আঘাতেও সেই তার লেশমাত্র বেস্থর বলে নি, সে কেবলই বলেছে ঃ পিতা নোহলি । ।
পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।