পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষশেষ \5\లీల আজ বর্ষশেষের সঙ্গে কাল বর্ষারম্ভের কোনো ছেদ নেই— একেবারে নিঃশব্দে অতি সহজে এই শেষ ওই আরম্ভের মধ্যে প্রবেশ করছে। কিন্তু, এই শেষ এবং আরম্ভের মাঝখানে একবার থেমে দাড়ানে। আমাদের পক্ষে দরকার। যাওয়া এবং আসাকে একবার বিচ্ছিন্ন করে জানতে হবে, নইলে এই দুটিকে মিলিয়ে জানতে পারব না। সেইজন্যে আজ বর্ষশেষের দিনে আমরা কেবল যাওয়ার দিকেই মুখ ফিরিয়ে দাড়িয়েছি। অস্তাচলকে সম্মুখে রেখে আজ আমাদের পশ্চিমমুখ করে উপাসনা । যৎ প্রয়স্ত্যভিসংবিশস্তি— সমস্ত যাওয়াই যার মধ্যে প্রবেশ করছে, দিবসের শেষ মুহূর্তে র্যার পায়ের কাছে সকলে নীরবে ভূমিষ্ঠ হয়ে নত হয়ে পড়ছে, আজ সায়াহ্নে তাকে আমরা নমস্কার করব। অবসানকে বিদায়কে মৃত্যুকে আজ আমরা ভক্তির সঙ্গে গভীরভাবে জানব— তার প্রতি আমরা অবিচার করব না। তাকে তারই ছায়৷ বলে জানব ‘যস্ত ছায়ামৃতম্ যন্ত মৃত্যুঃ’ । মৃত্যু বড়ো স্বন্দর, বড়ো মধুর। মৃত্যুই জীবনকে মধুময় করে রেখেছে। জীবন বড়ো কঠিন ; সে সবই চায়, সবই আঁকড়ে ধরে ; তার বজ্ৰমুষ্টি কৃপণের মতে কিছুই ছাড়তে চায় না। মৃত্যুই তার কঠিনতাকে রসময় করেছে, তার আকর্ষণকে আলগা করেছে ; মৃত্যুই তার নীরস চোখে জল এনে দেয়, তার পাষাণস্থিতিকে বিচলিত করে । আসক্তির মতো নিষ্ঠুর শক্ত কিছুই নেই ; সে নিজেকেই জানে, সে কাউকে দয়া করে না, সে কারও জন্তে কিছুমাত্র পথ ছাড়তে চায় না। এই আসক্তিই হচ্ছে জীবনের ধর্ম ; সমস্তকেই সে নেবে বলে সকলের সঙ্গেই সে কেবল লড়াই করছে। * ի ত্যাগ বড়ো স্বন্দর, বড়ো কোমল। সে দ্বার খুলে দেয়। সঞ্চয়কে সে কেবল এক জায়গায় স্তৃপাকাররূপে উদ্ধত হয়ে উঠতে দেয় না। সে ছড়িয়ে দেয়, বিলিয়ে দেয়। মৃত্যুরই সেই ঔদাৰ। " মৃত্যুই পরিবেশন